“লীলা নাগ শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি” বইয়ের শেষ ফ্ল্যাপ এর লেখা: লীলা নাগ বিচিত্র ও বিস্ময়কর জীবনের অধিকারী নারী । তিনি স্পর্শ করেছেন বঙ্গ-ভূখণ্ডের অসংখ্য মানুষের হৃদয়, নানাভাবে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। পরহিতব্রতে ও দেশব্রতী চেতনায়। ঢাকাতে কেটেছে তাঁর তারুণ্যের কর্মদীপ্ত দিনগুলাে। নব-প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী তিনি, কতােভাবেই না জড়িয়ে ছিলেন সমাজ ও দেশের মুক্তি-সাধনায় । মুগ্ধ তরুণসমাজের কাছে তিনি ছিলেন আদর্শস্থানীয়, তরুণীদের জাগরণের প্রেরণা ও অবলম্বন । শিক্ষা প্রসারে তার কর্মসাধনার বিস্তৃতি অবিশ্বাস্য, গােপন। বিপ্লবী সংগঠন পরিচালনায় দক্ষতা বিস্ময়কর, সামাজিক বিবিধ তৎপরতায় নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বহুব্যাপ্তভাবে। সুভাষ বসুর যােগ্য সাথি হিসেবে দাগ কেটেছেন সর্বভারতীয় রাজনীতিতে, বরণ করেছেন। কারাজীবন এবং শত প্রতিকূলতার মধ্যেও কখনাে ছেড়ে দেন নি হাল । দেশভাগের পর দেশান্তরী হতে বাধ্য হলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে উদ্বাস্তু দুর্গত। মানুষজনের আস্থার নির্ভর হয়ে জড়িয়ে পড়লেন। আরেক ধরনের রাজনীতিতে, সেই সঙ্গে চলছিল। ‘জয়শ্রী” পত্রিকা সম্পাদনা ও আরাে নানামুখী কাজ। বিশ শতকের বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে লীলা নাগের স্থান তাই অনন্য। তার জন্মশতবর্ষে সেই অনন্যতার পরিচয় মেলে ধরার । প্রয়াস হিসেবে নিবেদিত হলাে এই গ্রন্থ, যা কেবল। মহীয়সী এক নারীর পরিচয় নয়, আমাদের কালের এক প্রেরণামূলক দলিল।
অজয় রায় জন্ম ৩০ ডিসেম্বর ১৯২৮ সালে ময়মনসিংহ জিলার ইশ্বরগঞ্জ উপজিলায় মাতামহের কর্মস্থলে। বাবা ড. প্রমথনাথ রায়, মা কল্যাণী রায়। বাড়ি কিশােরগঞ্জ জিলার বনগ্রামে। শৈশব ও কৈশাের কেটেছে বাবার সাথে ভারতের যুক্তপ্রদেশে বারানসী শহরে। বাবা সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী ভাষার অধ্যাপক ছিলেন। সেখান থেকেই ম্যাট্রিক পাশ করেন ১৯৪৩ সালে। পরে বিজ্ঞান বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর ফার্মেসীতে ভর্তি হন। এই সময় এক বছরের ব্যবধানে প্রথমে বাবা ও পরে মা’র মৃত্যুর পর অন্যান্য ভাইবােনদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি বনগ্রামে চলে আসতে বাধ্য হন। এখানে ঠাকুরদা, ঠাকুরমার তত্ত্বাবধানে ছয় ভাইবােনের জীবন শুরু হয় অন্যভাবে। ১৯৪৬ সালে তিনি মুন্সীগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজে ভর্তি হন। স্কুলে থাকতেই বামধারার ছাত্র সংগঠন ছাত্রফেডারেশন ও কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন। গ্রামে এসেও এই ধারার কাজ গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন এবং হরগঙ্গা কলেজে ভর্তি হবার পরও সেখানে একই ধারার কাজ চালিয়ে গেছেন। এ সময় তিনি ঢাকা জিলা ছাত্র ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। সভাপতি ছিলেন শহীদ মুনীর চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন প্রসাদ মুখােপাধ্যায়। ডিগ্রী পরীক্ষার ফল বেরােবার আগেই ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে ছাত্র ফেডারেশনের এক সভা থেকে পুলিশী হামলায় আত্মগােপনে যেতে বাধ্য হন। পরে গ্রাম থেকে গ্রেফতার হন। বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রেফতার হয়ে সব মিলিয়ে তিনি পনের বছরের মত জেল খেটেছেন। আত্মগােপন থেকেছেন বার বছরের মত। এই সময়কালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। পাকিস্তান আমলে প্রথমে ময়মনসিংহ জিলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং ১৯৭৬ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯২ সালে তিনি পার্টির সদস্যপদ ত্যাগ করে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন। বিয়ে করেছেন ১৯৭১ সালে। স্ত্রী জয়ন্তী রায়। ছেলে মেয়ে তিনজন। অনিন্দিতা, অমিতাভ ও অদিতি। বর্তমানে ঢাকায় থাকেন এবং সাধ্যমত সামাজিক কাজকর্মে যুক্ত থাকতে চেষ্টা করেন। প্রকাশিত গ্রন্থ : বাঙলা ও বাঙালী’, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি : অতীত ও বর্তমান, বাংলাদেশের ভূমিব্যবস্থা, রাজনীতি কি ও কেন?’, ‘পুঁজিবাদী অর্থনীতি, বাংলাদেশের কৃষকবিদ্রোহ’, ‘গণআন্দোলনের নয়বছর’, ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা', ‘আমাদের জাতীয়তার বিকাশের ধারা, ‘বাংলাদেশের বামপন্থী আন্দোলন ১৯৪৭-৭১', ‘শিক্ষানবিশীর হাতেখড়ি’, ‘সাম্প্রতিক,' তীরের অন্বেষায়। এছাড়া নিয়মিতভাবেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এখনাে লিখে থাকেন।