পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দম্পতি ছিলেন রাসুলে আরাবি সা. ও উম্মুল মুমিনিন খাদিজা রা.। তাঁদের দাম্পত্য জীবনের বসন্ত-উদ্যান ছিল ভালোবাসা ও সম্প্রীতির সৌরভে সুরভিত। এ তো ছিল আত্মিক ভালোবাসার সৌন্দর্যে সুশোভিত এক বাগান। এ বাগানের একটি সুরভিত গোলাপের নাম ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ । তিনি যেমন ছিলেন মহান পিতার নববি আদর্শের প্রদীপ্ত দীপশিখা; তেমনি ছিলেন উম্মাহর প্রতিটি সদস্যের জন্য এক আদর্শ ব্যক্তিত্ব। তাঁর জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি প্রহর ও ক্ষণের মাঝে আমাদের সবার মাঝে রয়েছে আলোকিত জীবন বিনির্মাণের শ্রেষ্ঠতর পাথেয়। সমাজ ও সমাজের মানুষের পচনশীল এই লয়ের যুগে দাঁড়িয়েও একজন মানুষ যদি নিজেকে নববি আদর্শের আলোয় উদ্ভাসিত করার স্বপ্ন দেখে, তখন তাকে অবশ্যই নবী-জীবনীর পাশাপাশি নবী-পরিবারের প্রতিটি সদস্যের অনুপম আলোকিত জীবন থেকে পাথেয় গ্রহণ করেই এগিয়ে যেতে হবে। নবী-সাহাবিদের জীবনীই হতে পারে আলোকের পথ দেখাবার এক অনন্য প্রদীপ। নবী-ঘরের সদস্যদের জীবনীও অমূল্য পাথেয়। মজার ব্যাপার হলো, রাসুল সা.-এর পবিত্রতম সিরাত, হাদিসের আলোকে রচিত সাহাবায়ে কেরামের বর্ণাঢ্যময় জীবনরেখার নানাদিক বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হলেও নবী-দুলালি ফাতেমা রা.-এর শৈশব, কৈশর ও সুখময় দাম্পত্যজীবনের সুশোভিত অধ্যায় নিয়ে পরিপূর্ণ বই বাংলা ভাষায় নেই বললেই চলে। এ শূন্যতা দূরীকরণে ‘ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ’ নামক অত্যন্ত চমৎকার একটি বই উপহার দিয়েছেন বাংলাভাষী পাঠকদের।
শাহাদাত হুসাইন। একজন তরুন উদিয়মান লেখক। ১৯৯৪ সালের ৭ই ডিসেম্বর লক্ষীপুর জেলার বশিকপুর গ্রামে তার জন্ম। দু বোন আর দু ভাইয়ের মধ্যে সে তৃতীয়। প্রাথমিক পড়া শুরু করে দত্তপাড়া কিন্টার গার্ডেন কেজি স্কুলে। আর কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স সম্মন্ন করে ২০১৮ সালে। বাংলাদেশের সুপ্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ থেকে। বইয়ের প্রতি ছোট সময় থেকে তার ভালোবাসা। বড় বোন ছিলো বইয়ের পোকা। কাজকর্ম বাদ দিয়ে সারাদিন উপন্যাস নিয়ে পড়ে থাকতো। ফাঁকে ফাঁকে ছোটদের দু একটা বই কিনে দিতো তাকে। কিনে দিয়েই তার কাজ শেষ হতো না, স্কুলের পরীক্ষার মত চলাতো তার উপর পরীক্ষা। বল, কী বুঝলি এ বই থেকে? কোন চরিত্র তোর কাছে ভালো লেগেছে? কোন জায়গাটা ভালো লাগলো? তাই অল্প বয়সেই তার পড়া হয়ে গেছে, নামি, বেনামি অনেক লেখকেরই বই। বই পড়ার অভ্যেস ছোট সময় হলেও লেখার অভ্যেসটা হয় অনেক পরে। তার প্রধান সখ হলো ডায়রি লেখা। এমন কোন বিষয় নেই যা সে ডায়রিতে লেখে না। প্রতিদিন সে লেখে। তার সহপাঠিরা যখন ফেসবুকে পোস্ট দিতে ব্যস্ত তখন সে ডায়রির পাতায় মনের মাধুরি মিশিয়ে মনের কথা লিখে রাখতে ব্যস্ত। কেউ তার লেখা পড়লে তার লজ্জা করতো। ভীষন ভাবে লজ্জিত হতো। কারণ একটা শব্দ লিখলে তার ভুল হতো দুটো। তারপরও লিখে যেতো। দীর্ঘ একটা সময় পর নিজের মনের ভেতর সে একটা রাজ্য গড়ে তুলেছে। যে রাজ্যটা কেবলই তার। সেখানে কেউ তার ভুল ধরে না। কেউ তার লেখা নিয়ে হাসে না। সেখানে কখনো সে প্রেমীক হয়, কখনো বাউন্ডুলে হয় কখনো সংগ্রামী হয়। নিজের মনের কথাগুলো ডাইরির পাতায় লিখতে থাকে সাবলীল ভাবে। বর্তমানে আট থেকে নয়টি ডায়রির মালিক। যে ডায়রিগুলোকে সে বন্ধু বলে ডাকে। তিন বছর আগেও একান্ত ঘনিষ্ট বন্ধু ছাড়া কেউ তার লেখা পড়েনি। তাই নিজেই ছিলো লেখক। আবার নিজেই সমালোচক। সর্বপ্রথম ডায়রির গন্ডি পেরিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালিকায় তার লেখা দেওয়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গন্ডি পেরুতেও লেগেছে বেশ কিছুটা সময়। ২০১৮ সালে ইসালামি অনলাইন পত্রিকা, আওর ইসলাম. কম এ নবিজীকে চিঠি লিখে জিতে নাও পুরষ্কার এ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। এবং দশ হাজার টাকার বই পুরষ্কার পায়। গল্পের প্রতি তার মোহ বেশি। তার মনের প্রধান আকর্ষণ। সে হিসেবে বিমল মিত্র, শরৎ চন্দ্র চট্রোপাধ্যায় তার প্রিয় লেখক। লজ্জাহর গল্পে বিমল মিত্রের প্রতি ভালোবাসা, আর মেঝ দিদি পড়ে শরৎ চন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মে। সামগ্রিক বিবেচনায় আবু তাহের মেসবাহ, আহমদ মায়মূন, নাসিম আরাফাত, যায়নুল আবেদীন, শরীফ মুহাম্মাদ, হুমায়ুন আহমেদ, বিভূতিভূষন বন্দোপাধ্যায় তার প্রিয় লেখক। বড় হয়ে আসলেও সে কিছু হতে পারবে কিনা সে তো ভবিষ্যত বলবে, তবে তার প্রবল ইচ্ছা এ এক জীবনে সে লড়ে যাবে। সে যুদ্ধ করবে। অবিরাম, প্রতিনিয়ত। কিছু স্বপ্নের জন্য। কিছু ভালোবাসার জন্য।