পৌরাণিক কথা-কাহিনির আকর্ষণ চিরায়ত। শুধু গল্প নয়, এইসব কথামালার পরতে পরতে আছে অখণ্ড ভারতবর্ষের ধূসর ইতিহাস। ইতিবৃত্তসমূহে লগ্ন হয়ে আছে প্রবহমান মানবজীবনের স্পন্দন ও বন্ধন। সুদূর অতীত এবং চলমান বর্তমানের এই সংযোগ পাঠককে বিস্মিত করে। একথা স্বীকার করতেই হবে, মহাভারত ও পুরাণের বহুবর্ণ কাহিনি নির্মাণে এখনকার জীবনচিত্র দুষ্প্রাপ্য নয়। প্রাচীন সাহিত্যের পুনঃপাঠ এখানেই সার্থক। একই সঙ্গে, মানুষের মর্মবীণার নিরবচ্ছিন্ন সুরঝঙ্কারের নিবিড় অনুসন্ধান, এই কাহিনিগুলির পুনর্নির্মাণের লক্ষ্য। এই গ্রন্থে যে-সমস্ত মহাভারতীয় এবং পৌরাণিক আখ্যান গৃহীত হয়েছে, তাদের প্রাচীন মুকুরে কোনও-না-কোনওভাবে আধুনিক জীবন প্রতিবিম্বিত। কোথাও তা ইঙ্গিতে-আভাসে চিত্রায়িত, কোথাও-বা বিস্ময়করভাবে সুস্পষ্ট। অতিশক্তিশালী পুরুষশাসিত সমাজে, তৎকালীন নারীরা যেভাবে আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয়িনী হয়েছে, তা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। নারীকে মান্যতা প্রদানে, সম্মানজ্ঞাপনে পুরুষ বাধ্য হয়েছে। অবমাননার ঘূর্ণি থেকে উত্থিত হয়েছে নতুন নারীসমাজ। মূলপাঠ অবলম্বনে পঁচিশটি কথামালার এই পরিবেশন এক আন্তরিক প্রচেষ্টা। আমাদের অন্তর, মনন ও প্রজ্ঞার প্রসারতা স্রোতধারার মতো বাধাহীন। অতীত থেকে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে তা এগিয়ে চলেছে। মহাকাব্য ও পুরাণসাহিত্যের পাঠক সেই যাত্রাপথের সঙ্গী।
Harsha Dutta-র জন্ম ১৯৫৫, কলকাতায়। শিক্ষা : বঙ্গবাসী কলেজ-স্কুল, রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বালকাশ্রম বিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীর এম. এ. এবং এম. ফিল.। স্কুলের দিনগুলিতেই সাহিত্যচর্চার হাতেখড়ি। কলেজ-জীবনে গল্প লিখেছেন বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে। ১৯৮৪-তে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘কামাদি কুসুম সকলে’ গল্পটির মাধ্যমে বৃহত্তর আত্মপ্রকাশ। এই পত্রিকাতেই মুদ্রিত মিতায়তন প্রথম উপন্যাস ‘অমল’। উপন্যাসটি সর্বস্তরের পাঠকের অভিনন্দন-ধন্য। প্রথম বড় উপন্যাস ‘ময়ূরাক্ষী, তুমি দিলে’ বহুর ভিড়ে এক স্বাতচিহ্নিত সৃষ্টি। জীবিকা : সাংবাদিকতা। ‘দেশ’ পত্রিকার সহ সম্পাদক। ‘সমরেশ বসু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯২) এবং ‘বিচয়ন সাহিত্য পুরস্কার’ (১৯৯৬)-এ ভূষিত।