নাগিব মাহফুজ তাঁর লেখক জীবনের সূচনা ঘটান মিশরের প্রাচীন ইতিহাস অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে। এর মাধ্যমে তিনি তাঁর জন্মভূমির পরিচিতি এবং সময়ের বিপুল ব্যবধান সত্ত্বেও প্রাচীনত্বের প্রেক্ষাপটে আত্মোপলব্ধি করতে ও নিজের পরিমণ্ডল সম্পর্কে জানতে এবং অন্যদের জানাতে চেষ্টা করেছেন। মিশরের যুদ্ধ, সংগ্রাম ও বিপর্যয়ের যুগগুলাতেও তিনি তাঁর দেশের সুদূর অতীত ইতিহাসের সঙ্গে একটি নির্ভরযোগ্য অবস্থানের সন্ধান করে কাটিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৩৯-৪৫ সালে প্রকাশিত তাঁর তিনটি উপন্যাসই ছিল মিশরের প্রাচীন ইতিহাসের ওপর, যার প্রথমটির নাম ‘আবাথ আল-আকদার' ('আইরোনিজ অফ ফেট' বা 'অদৃষ্টের পরিহাস')। উপন্যাসটির মূল আরবি নাম ছিল 'হিকমাত খুফু' (দ্য উইজডম অফ খুফু)। ফারাও খুফু মিশরের প্রাচীন রাজবংশের চতুর্থ প্রজন্মের শাসক, যিনি ২৫৭৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২৪৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। একজন জ্যোতিষী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রাজ্যের উত্তরাধিকারী হবে না, বরং রাজক্ষমতা চলে যাবে ‘রা' মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের পুত্র ডিজেদেফের হাতে। ফারাও খুফু ভাগ্যের এ-বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেই শেষ রক্ষা করতে পারেন নি।
(আরবি: نجيب محفوظ) (জন্ম: ডিসেম্বর ১১, ১৯১১ - মৃত্যু: আগস্ট ৩০, ২০০৬) নোবেল বিজয়ী মিশরীয় সাহিত্যিক। নাগিব মাহফুজ মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি মিশরীয় বিপ্লবে ১৯১৯ অংশ গ্রহণ করেন। তার মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে, তিনি দর্শন বিভাগে ১৯৩০ সালে ভর্তি হন মিশরীয় বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়)। ১৯৩৪সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন জরেন। এর পর ১৯৩৬ সালে দর্শনের গবেষণা কাজে একটি বছর অতিবাহিত করেন। পরে তিনি গবেষনা পরিত্যাগ করেন এবং একটি পেশাদার লেখক হয়ে যান। মাহফুজ তারপর আল-রিসালায়ের জন্য একজন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন, এবং এল-হিলাল এবং আল-আহরাম ছোটোগল্প লিখতে অবদান রাখেন। নাগিব মাহফুজ ১৭ বছর বয়স থেকে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। জীবদ্দশায় ৩০টি উপন্যাস লিখেলও ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে প্রকাশিত কায়েরা ট্রিলজি তাঁকে আরব সাহিত্যের এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেন। এতে তিনি ইংরেজ শাসন থেকেমুক্ত হওয়ার সময়কালে মিশরের ঐতিহ্যবাহী শহুরে জীবনধারা ফুটিয়ে তোলেন । এ উপন্যাসের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৮৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। নাগিব মাহফুজের উপন্যাসের প্রায় অর্ধেকেরও বেশীর চলচ্চিত্রায়ন হয়েছে। উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি ১০০ টিরও বেশি ছোটগল্প রচনা করেছেন। এগুলির বেশীর ভাগই পরে ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে।