ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসে টেড হিউজ অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, লেখক ও অনুবাদক হিসেবে স্থান পেয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী বৃটিশ দৈনিক দি টাইমস যুদ্ধোত্তর শ্রেষ্ঠ লেখকদের একটি তালিকায় (২০০৮) তাঁর অবস্থান চতুর্থ নির্ধারণ করেছে। রাজকবি ওয়ার্ডসওয়ার্থের পর তাঁকেই প্রকৃতির কবি বলা হয়ে থাকে। ওয়ার্ডওয়ার্থ (১৭৭০ - ১৮৫০) প্রকৃতির মনোরম সৌন্দর্য রক্ষার কথা বলেছেন। শত বছর পরে রাজকবি টেড হিউজ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পরিবেশ রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছেন। তিনি ১৯৬০ এর দশক থেকে পানির দূষণ, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় এবং জীববৈচিত্রের হুমকি থেকে ধরিত্রীকে রক্ষার লক্ষ্যে আমৃত্যু কাজ করেছেন। ক্যানসারের কষ্ট নিয়ে যখন মৃত্যুপথ যাত্রী তখনও ধরিত্রীকে নিয়ে তাঁর উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছিলেন: Both Poles are glowing. Once they go/Your whole realm flies off its axle/Your palace is rubbish in space./And look at Atlas. He is in trouble./His shoulders are fabulous, but who can carry /The incineration of a Universe? (Ted Hughes, Tales from Ovid, 1997, p. 41). তিনি ১৯৬১ সাল থেকে আমৃত্যু গ্রামেই জীবনযাপন করেছেন। গ্রামে খামার করেছেন। উন্নত জাতের গরু পালন করেছেন। গাছপালা লাগিয়েছেন। মাছ চাষ করেছেন। নদী সংস্কার করেছেন। নদীতে মাছের প্রজনন রক্ষা ও বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। শহর থেকে শিশুদেরকে গ্রামে এনে প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত করেছেন। তিনি কেবল লেখক নন, একজন সমাজ সংস্কারকও বটে। টেড হিউজ নানা রকমের উপখ্যান, পুরাণ, ধমর্তত্ত্ব - শ্যামানিজম, বৌদ্ধবাদ, আলকেমি, নৃতত্ত্ববিদ্যা, জ্যোতিষশাস্ত্র, সংখ্যাতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ক জ্ঞান তাঁর সাহিত্যকর্মে স্বার্থকভাবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর কবিতার প্রতীকী অর্থ খুবই জটিল ও রহস্যাবৃত। এই বইতে মোট ২৯টি কবিতা রয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটি প্রতিনিধিত্বমূলক কাব্যগ্রন্থ থেকে ২২টি কবিতা নির্বাচন করা হয়েছে। একটি কবিতা ঢাকায় অবস্থানকালে অনুবাদককে শুভেচ্ছা জানিয়ে তার নোটবুকে লিখেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তা ক্যাপ্রিশিও কাব্যগ্রন্থে সিস্টোলি ডায়াস্টলি শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। বৃটিশ লাইব্রেরি থেকে ২০১০ সালে উদ্ধারকৃত একটি হৃদয় কাঁপানো কবিতা লাস্ট লেটার এবং বাংলাদেশে লেখা চারটি কবিতা ছাড়াও কবির প্রথম স্ত্রী প্রখ্যাত কবি ও লেখক সিলভিয়া প্লাথের একটি প্রাসঙ্গিক কবিতা অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এই কাব্যগ্রন্থটির গুরুত্ব বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। টেড হিউজের কবিতার জটিল জালের রহস্য উন্মোচনের লক্ষ্যে অনুবাদক কবির জন্মস্থান ইয়র্কশায়ার এবং জীবনের শেষ ৩৭ বছরের আবাসভূমি ডেভনে তাঁর পোয়েট্রি ট্রেইলগুলো দেখে এসেছেন। কয়েকজন কবি বন্ধুর পরামর্শ নিয়ে অনুবাদের মান উন্নত করেছেন। কবিতাগুলো সহজবোধ্য করার লক্ষ্যে বিশ্বস্ততার সঙ্গে কবিতার পটভূমি প্রস্তুত করা হয়েছে। কবি সম্পর্কে পরিবেশন করা হয়েছে সচিত্র তথ্য। এই বইয়ের মাধ্যমে যে কোনো পাঠক কালজয়ী কবি টেড হিউজের শ্রেষ্ঠ কবিতার সঙ্গে কিছুটা হলেও পরিচিত হবেন।
Title
বাংলাদেশ সফর ও পটভূমিসহ টেড হিউজের নির্বাচিত কবিতা
লিয়াকত খানের জন্ম ও প্রাথমিক শিক্ষা সন্দ্বীপের মগধরা গ্রামে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়ালেখা করেছেন ঢাকায়, যুক্তরাষ্ট্রে, যুক্তরাজ্যে এবং অস্ট্রেলিয়ায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য পড়ার সময় সৃজনশীল লেখালেখির প্রতিআগ্রহী হয়ে উঠেন। মূলত শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম এবং পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে লেখালেখি করেথাকেন। প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের সংখ্যা সাত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বিষয়ক একটি বই ইংরেজিতেঅনুবাদ করেছেন The Liberation Struggle of Bangladesh (New Delhi and Dhaka: 1999) শিরোনামে। বইটির মূললেখক ড. মোহাম্মদ হাননান। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র বিষয়ক অনূদিত শিশুতোষ বইয়ের সংখ্যা চার। বইগুলোর মূল লেখক টেডহিউজ। একটি বই গ্রিক উপখ্যান অবলম্বনে বীরপুত্রদের স্বর্ণলোম উদ্ধারের কাহিনী নিয়ে রচিত। বিগত ৩৩ বছর ধরে টেডহিউজ ও সিলভিয়া প্লাথের জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর লেখা Ted Hughes in Bangladesh: A Memoir (2022) এবং কবির যুগলবন্দী: টেড হিউজ ও সিলভিয়া প্লাথ (২০২৩) পাঠক মহলে সমাদৃত। Ted Hughes in Bangladesh বইটি বিলেতের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের টেড হিউজ গবেষক ও ইংরেজির শিক্ষকদেরকাছে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছে। লিয়াকত খান কর্মজীবনের শুরুতে ১৯৮৪ সালে ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত টিএন্ডটি কলেজ-এর প্রভাষক ছিলেন। একইবছরের বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিসিএস তথ্য ক্যাডারে যোগদান করেন। তথ্য ক্যাডারের পেশাগত সুযোগে দেশেরইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে ব্যাপক গবেষণার সুযোগ লাভ করেন। পত্রপত্রিকার সম্পাদনা, প্রামাণ্যচিত্র নির্মান, চলচ্চিত্রেরসেন্সর এবং মিডিয়া ব্যবস্থাপনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণের সময় ছিলেনমহাপরিচালক, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর। দেশের তিনটি শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিইও/বিভাগীয় প্রধানহিসেবে প্রায় ১২ বছর কাজ করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের শিশুদের জন্য বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শিশুতোষ বইগুলো থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে একটি করে বই অনুবাদের কাজ হাতে নিয়েছেন। তিনি ৪০টিরও বেশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেছেন।উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০।