গ্রন্থ পরিচিতি মওলানা ভাসানী নামের এই গ্রন্থটি মওলানা ভাসানীর মৃত্যুর (১৭ নভেম্বর ১৯৭৬) পর, তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ, যা মার্চ ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত হয়। এ হলো গ্রন্থটির ঐতিহাসিক দিক। ভাসানীর মৃত্যুর পর তাঁকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরার একটি প্রচেষ্টা এখানে রয়েছে। অন্য আর একটি দিকেও এ গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো এতে সংকলিত বিখ্যাত লেখকদের রচনা Ñ সিরাজুল হোসেন খান, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আহমেদ হুমায়ুন, নির্মল সেন, রাশেদ খান মেনন, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, মাহবুব উল্লাহ, আবদুস সালাম, বদরুদ্দীন উমর, মাহফুজ উল্লাহ, চিন্ময় মুৎসুদ্দী, ইন্দু সাহা, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর এবং আরেফিন বাদল। বর্তমান বাঙ্গালা গবেষণা সংস্করণে নতুন ৪টি রচনা যুক্ত করা হয়েছে Ñ এগুলির লেখকবৃন্দ হচ্ছেন Ñ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, ফয়েজ আহমদ, এবিএম মূসা, আজাদ খান ভাসানী। এছাড়া সংকলিত হয়েছে মওলানার ঐতিহাসিক কিছু চিত্র, কার্টুন, পত্র ইত্যাদি। দুষ্প্রাপ্য এই গ্রন্থটি ভাসানী গবেষণায় ভূমিকা রাখবে, তেমনি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলে আমরা মনে করি। এ ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন সব্যসাচী লেখক-সম্পাদক এবং ভাসানী গবেষণা প্রকল্পের অন্যতম কর্ণধার আরেফিন বাদল।
স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী একাত্তরে বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে পরপর দুটি ব্যক্তিগত চিঠি লিখেছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। চিঠি দুটির বিষয়বস্তু একই। বলা যায় পরের চিঠিটা আগেরটির তাগিদপত্র মাত্র। বেশকিছু বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয়ের সাথে যে বিষয়টি নিয়ে প্রধানত নানা মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত, চর্চিত- তাহলো 'বাংলাদেশ—ভারত কনফেডারেশন' গঠন প্রসঙ্গ। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন এই স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়েই মহল বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম প্রবক্তা মওলানা ভাসানী সম্পর্কে নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। এখন অবধি কোন গবেষক কিংবা ইতিহাসবিদ এর মূল রহস্য উদঘাটনে তৎপর হতে দেখা যায়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে মওলানা ভাসানী কেন আলোচ্য চিঠি দুটি লিখেছিলেন তা নিয়ে রীতিমত ভাবিত হওয়ার বিষয়ই বটে। জাতীয় স্বার্থেই এর গভীরে প্রবেশ অত্যন্ত জরুরি। 'বাংলাদেশ—ভারত কনফেডারেশন : একাত্তরে ইন্দিরাকে ভাসানীর চিঠি' বইটিতে আমরা তারই প্রতিফলন দেখতে পাবো। বইটির রচয়িতা সুসাহিত্যিক ও গবেষক আরেফিন বাদল মওলানা ভাসানীকে কাছ থেকে দেখেছেন ও দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে বুঝবার চেষ্টা করেছেন। ১৯৭৬ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রার পক্ষ থেকে অসুস্থ্য মওলানা ভাসানীর সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে তাঁর কাছে 'কনফেডারেশন' প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া একমাত্র জীবিত ব্যক্তি হিসেবে এটি তার দায়বদ্ধতা ও ঐতিহাসিক দায়িত্বও বটে। তারই ফসল এই বই। এই গ্রন্থে বিভিন্ন তথ্য—উপাত্তের সহায়তায় এর রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে গ্রন্থ—লেখকের নিজস্ব মতামত চাপিয়ে দেয়ার কোন প্রয়াস নেই। সংযোজিত তথ্য—উপাত্তের সংশ্লিষ্ট সূত্রও এগুলোর সাথেই সংযোজন করে দেয়া হয়েছে। কেনো এবং কোন্ পরিস্থিতির বাতাবরণে আলোচ্য চিঠি দুটির অবতারণা- তার প্রেক্ষাপট, মওলানা ভাসানীর উদ্দেশ্য, আন্তরিক তাগিদ কিংবা রাজনৈতিক কৌশল বা অন্য কোন অনুসঙ্গ; সেটির অন্বেষণের প্রয়াসই এই গ্রন্থ। আমাদের বিশ্বাস, গ্রন্থটি পাঠ করলে পাঠক নিজেই একটা সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে সক্ষম হবেন। এবং তা যদি হয়, সেটিই হবে আমাদের শ্রমের স্বার্থকতা। আমরা বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে অনেক গবেষণাকর্মী এই বিষয়ে আরো তথ্যনির্ভর বস্তুনিষ্ঠ গবেষণাকর্ম উপহার দিয়ে জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবেন। ভাসানী গবেষণা প্রকল্পের তৃতীয় বই এটি।