ইয়াসমীন গল্প-উপন্যাস কিংবা যেকোনো ধরনের বই পড়ুয়ারাই এক জীবনে অজস্র বই পড়ে থাকেন। যার সবগুলোর ভেতরের বিষয়বস্তু তো দূরের কথা, অনেক বইয়ের নামটাও হয়তো আমাদের মনে থাকে না। কিন্তু কিছু বই থাকে, যা আমাদের মনে জায়গা করে নেয় পরম আপন কোনো বন্ধুর মতো। সেসব বইয়ের কিছু চরিত্র যেন হয়ে যায় আমাদের সত্তার এক অংশ। শৈশবের অমলিন স্মৃতির মতো। চোখ বন্ধ করলেই যার দৃশ্য ভেসে ওঠে স্মৃতির ফ্রেমে। সাতটি গল্পের সংকলনে ‘ইয়াসমীন’ এমনই একটি বই। যেমনটা আমরা বলেছি, “পড়ে শেষ করার পরও পাঠকের কানে বাজতে থাকবে বিস্তীর্ণ মাঠের শেষপ্রান্তে থাকা পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসা শব্দের মতো। শৈশব-কৈশোরের সোনাঝরা দিনগুলির মতো যা স্মৃতির ফ্রেমে থেকে যাবে দিনের পর দিন।” ঠিক এমনই এক অসহ্য সুন্দর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন পাঠকবৃন্দ। গুলমোহর-একটি হার্দিক গল্প। মানুষের জীবনের নাটকীয়তা, বাস্তবতা, ঘটনা, দুর্ঘটনা এসবের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই । গল্পে অনেকগুলো নাটকীয়তার সমাবেশ ঘটে বলে একে অতিকথন নাটকীয় মনে হয়। কিন্তু আলাদাভাবে এর প্রত্যেকটিই সত্য। তাই উপন্যাসকে কেবল কল্পনা বলে হেলায় উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। গুলমোহর তিন তরুণ তরুণীর গল্প যারা তিন জগতের মানুষ। মানুষের হৃদয়ের মতো রহস্যময়, জটিল, বর্ণিল আর কিছু নেই পৃথিবীতে। সেই রহস্যময়, জটিল ও বর্ণিল জীবনকে শব্দ- বাক্য-পরিচ্ছেদের ছকে ফেলে এক নিদারুণ উপস্থাপনার কারিশমা দেখিয়েছেন লেখিকা এ উপন্যাসে।
আফিফা মারজানা—নব্বই দশকে ঝালকাঠি জেলায় তার জন্ম। বেড়ে উঠেছেন বরিশাল শহরে। স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ভর্তি হন মাদরাসায়। কওমী মাদরাসা থেকে তাকমিল (স্নাতকোত্তর) শেষে শিক্ষকতা করেছেন দেশের স্বনামধন্য একাধিক প্রতিষ্ঠানে। ছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক গুরুদায়িত্বেও। সে-কথা উল্লেখ করে পরিচিতি ভারী করার সুযোগ থাকলেও, তার মূল পরিচয় স্বীয় লেখনীতে। বই পড়তে ভালোবাসেন ছোটোবেলা থেকেই। ভালোবাসেন দীর্ঘ পাঠলব্ধ জীবনের চিন্তা-বোধ-অনুভূতিকে লেখায় ফুটিয়ে তুলতে। তাই সাংসারিক শত ব্যস্ততা ও কাজের ফাঁকেও লিখে চলেছেন। ‘ইয়াসমীন’ ও ‘গুলমোহর’-এর মতো চমৎকার দুটি বইয়ের লেখিকা তিনি হঠাৎ করে হয়ে ওঠেননি। দেশের প্রথম সারির মাসিক ম্যাগাজিনেও নিয়মিত লিখেছেন একসময়। শুধু নিজ বইয়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি তার অভিজ্ঞতা। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ হস্ত-দৃষ্টে সম্পাদনা ও নিরীক্ষণ করেছেন প্রায় অর্ধ-শতাধিক বই। তবে এ-সবকিছুকে ছাপিয়ে তিনি পুরোদস্তুর সংসারী এক মানবী, তিন সন্তানের সুখী জননী। সন্তানদেরকে আদর্শরূপে গড়ে তোলাই মুখ্য দায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি৷ আমরা বিশ্বাস করি, বাংলা সাহিত্যকে দেওয়ার মতো তার মাঝে আরও অনেক সম্ভাবনা আছে। পরবর্তী বইয়ে তিনি গুলমোহর-ইয়াসমীনকেও ছাড়িয়ে যাবেন, সেই প্রত্যাশার সহিত জ্ঞান ও সাহিত্যের জগতে এ-পথচলায় আমরা তার সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করছি।