উঠন্ত মুলাে পত্তনেই চেনা যায়-কথাটা বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে একেবারে ষােলােআনা প্রযােজ্য। কৈশােরেই যেমন রবীন্দ্র-নজরুলের কাব্যপ্রতিভার বিকাশ ঘটেছিলাে, বাংলা ভাষাভাষীদের বিস্ময়ের উদ্রেক করেছিলাে, ঠিক তেমনি তাদেরই উত্তরসূরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও রাজনৈতিক প্রতিভার উন্মেষ ঘটেছিলাে কৈশােরেই। গােপালগঞ্জের স্কুলজীবনে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির হাতেখড়ি। তখনই তিনি প্রথম কারাগারে যান। ষড়যন্ত্রের শিকার হন। অসাম্প্রদায়িক-মানবিক চেতনার উন্মেষ ঘটে তাঁর স্কুলজীবনেই। | অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হককে গােপালগঞ্জে সংবর্ধনা দেয়া নিয়ে যে হট্টগােল হয় তাতে স্কুলছাত্র মুজিব নেতৃত্বশীল ভূমিকা রেখেছিলেন। প্রতিপক্ষরা বালক মুজিবকে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে, পুলিশের সাথে যােগসাজশ করে মামলা ঠুকে দেয়। বাল মুজিবের সাতদিনের জেল হয়। ঘটনাটি ঘটে ১৯৩৯ সালে। তখন তার বয়স মাত্র ১৯ অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। বঙ্গবন্ধুর প্রথম কারাজীবন সম্পর্কে ড.মযহারুল ইসলাম বলেছেন : ১৯৩৯ সালে তিনি তখন গােপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র (৩ বছর অসুস্থতার কারণে তাঁর ছাত্রজীবনের বিরতি ঘটে)। সে-সময় শেরেবাংলা ফজলুল হক সাহেব স্কুল পরিদর্শনের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। নেতাকে যথাযােগ্য সংবর্ধনা জানাতে হবে। প্রথমদিকে কংগ্রেসের সমর্থকগণ এতে সম্মত হন। কিন্তু পরে তাঁরা বেঁকে বসলেন এবং ঐ সংবর্ধনা প্রদান থেকে তারা বিরত থাকেন ও বাধার সৃষ্টি করেন। যাহােক, নেতাকে যথারীতি সংবর্ধনা জানানাে হলাে। হক সাহেব চলে যাবার পর এই ব্যাপারে মন কষাকষি বচসা ও কথা কাটাকাটি চলতে থাকে।
মাহমুদুল বাসার আমার পরিচিত এবং প্রিয় লেখক। দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশের জাতীয় পত্রিকাগুলােতে তিনি প্রবন্ধ ও কলাম লিখছেন। তা সাগ্রহে পড়ি। আর নিষ্ঠা অতুলনীয়। সৎ লেখক বলতে, যাদের বােঝায়, তিনি তাদের একজন। মাহমুদুল বাসার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৬ সালের ২৬ জুন, ফরিদপুর। জেলার ভাঙ্গা থানার কাপুড়িয়া সদরদী গ্রামে। তার পিতার নাম আবদুল করিম মিঞা, মাতার নাম লালমতি বেগম। পড়ালেখা করেছেন, ভাঙ্গা ঈদগাহ প্রাইমারি স্কুলে, ভাঙ্গা হাইস্কুল, ভাঙ্গা কে, এম, কলেজে। ১৯৮০ সালে ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে এম, এ, পাশ করেন। এক সময় চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। এখন ভিজিটিং শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন। করছেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজে। তার উল্লেখযােগ্যগ্রন্থ “সিরাজউদ-দৌলা থেকে শেখ মুজিব’, স্বাধীনতার স্থাপতি’, ‘স্বকাল ও সমকাল, বাংলা ভাষা থেকে বাংলাদেশ’, ‘আবদুল গাফফার চৌধুরী ও এক জীবন্ত কিংবদন্তী’ । ২০১১ এর বই মেলায় এসেছে ‘বঙ্গ জননী ফজিলাতুন্নেসা। এই মুহুর্তে কাজ করেছেন সাংবাদিক-সাহিত্যিক সন্তোষ গুপ্তের ওপর। এরপর কাজ করবেন শহীদ অধ্যাপক আনােয়ার পাশার ওপর। মাহমুদুল বাসারের জীবন শিল্পী জহীর রায়হান' বইটি মনােযােগ দিয়ে। পড়েছি। এতে তার পরিশ্রমের স্বাক্ষর আছে। গবেষণামূলক পর্যবেক্ষণ এ বইটিকে মূল্যবান করে তুলেছে। জহির রায়হানের প্রতিটি গল্প, প্রতিটি উপন্যাস, ধরে আলােচনা করেছেন লেখক। জহির রায়হানের রাজনৈতিক সামাজিক চেতনা এবং শিল্প চেতনার বিশ্লেষণ করেছেন। বাংলাদেশে জাহির রায়হানের মত কথা শিল্পীর ওপর এমন বই দুর্লভ।