প্যারেন্টিং : সন্তান প্রতিপালনের কলাকৌশল বইটি পিতা-মাতাকে সুদক্ষ করে তোলার গাইডলাইন। চিন্তার উদ্রেককারী ও গবেষণাধর্মী বইটিতে এমনভাবে সন্তান প্রতিপালনের কলাকৌশল সংক্রান্ত বিস্তৃত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যা সহজেই যেকোনো বাবা-মায়ের বোধগম্য হবে। কীভাবে অভিভাবক সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবেন সে সম্পর্কিত দরকারী বিষয়গুলো বর্ণনা করা হয়েছে। শিশু সন্তান লালন-পালনে দরকারী তাত্ত্বিক জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেয়া পরামর্শগুলো শতভাগ সময়োপযুগী। শক্তিশালী টিপসগুলো পুরোই বাস্তবসম্মত। শিশুর সঠিক যত্ন ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বিকাশ নিশ্চিতে সর্বশেষ গবেষণাগুলোর তথ্য-উপাত্তে এটি পরিপূর্ণ। বইটিতে আছে- বাচ্চাদের উন্নতি করতে কোন কৌশলগুলি পিতামাতা অবলম্বন করবেন, অভিভাবকত্ব থেকে হতাশা কিভাবে দূর করবেন এবং সুখী পারিবারিক সম্পর্ক কিভাবে গড়ে তোলবেন। বইটিতে চরিত্র, জ্ঞান, মূল্যবোধ ও দক্ষতা বিকাশের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সী সন্তানদের মধ্যে একটি বিশ্বাস-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ার জন্য বাবা-মাকে উপযুক্ত নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছে। প্রস্তাবিত অনেক কৌশলের মধ্যে রয়েছে: বাচ্চাদের কীভাবে সমস্যা সমাধান করতে হয়, সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং আত্মসম্মান বিকাশ করতে হয় তা শেখানো। আসলে প্যারেন্টিং সম্পর্কিত জ্ঞান ও কৌশল ভালোভাবে জানতে পারলে সন্তানদের কার্যকরী পন্থায় লালন-পালন করা সম্ভব। আজকের আধুনিক বিশ্বে নাগরিক দায়িত্ববোধ, স্রষ্টার ব্যাপারে সচেতন, চারিত্রিকভাবে সফল, নীতি-নৈতিকতা-মূল্যবোধ সম্পন্ন অর্থবহ-সার্থক জীবনের অধিকারী করে সফলভাবে সন্তানদের বড় করা সহজ নয়। তবে এটা অসম্ভবও নয়। কার্যকরী অভিভাবকত্বই এক্ষেত্রে যথার্থ ফলাফল আনার চাবিকাঠি। বইটিতে শিশুদের লালন-পালনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যার মোকাবেলায় ইসলামিক সমাধান প্রস্তাব করা হয়েছে। শিশুর শারীরিক-মানসিক-বুদ্ধিবৃত্তিক ও আত্মিক বিকাশের ব্যাপারে বইয়ে বর্ণিত তত্ত্ব প্রভাবিত করে। মনোবিজ্ঞানের কিছু ধারণা জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও তা সাধারণ ভুল হিসেবে অসাঢ়তা সম্পর্কে বলা হয়েছে। বইটি অভিভাবকদের অন্তর্দৃষ্টিকে প্রসারিত করবে। বাড়ির পরিবেশকে শিশুবান্ধব করতে উৎসাহিত করবে। শিশুদের সমস্যা মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পথনির্দেশ করবে। পারিবারিক বিষয়গুলি উপস্থাপনে বইটি অনন্য ও ব্যতিক্রমী। এটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। বইটি পিতামাতাদের সাহায্যের ক্ষেত্রে খুবই মূল্যবান। যা শিশুদের প্রতি সঠিক অনুভূতি জাগিয়ে তোলতে নির্দেশ করে। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করার দুর্দান্ত কাজকর্মের ব্যাপারে গাইডলাইন দেয়। পিতামাতা এসব পরামর্শ প্রয়োগ করে একটি সুস্থ ও ইতিবাচক পারিবারিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে। বইটিতে কীভাবে একজন কার্যকর অভিভাবক হতে হবে তার একটি বিস্তৃত নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছে৷ লেখকরা তত্ত্ব ছাড়াও ব্যবহারিক ও প্রয়োগযোগ্য উপায়-পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন। বইটির বিন্যাস খুবই পাঠযোগ্য যা পাঠককে অভিভূত করে। যেভাবে অধ্যায়গুলিতে প্যারেন্টিংয়ের মতো চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্রে পুরো পরিবারকে জড়িত করার উপর জোর দেয়া হয়েছে তা পাঠকের পছন্দ হবে। কীভাবে সন্তান লালন পালনের কাজ করতে হবে তার ব্যবহারিক অনুশীলনগুলোও প্যারিন্টেং চর্চায় কাজে লাগবে। ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়া মুসলিম উম্মাহর অগ্রাধিকার। সৎ ও যোগ্যতাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী দ্বারাই সম্ভব মুসলিম বিশ্বে বিরাজমান সমস্যার কার্যকরী সমাধানে পৌঁছানো। আর সেই বিশাল কাজটি শুরু হয় পরিবার থেকে। কারণ পরিবারই হলো প্রজন্ম গড়ার সূতিকাগার, আর বাবা-মায়েরা হলেন তার শ্রেষ্ঠ কারিগর। আর প্যারেন্টিং হলো বাবা-মায়েদের জন্য অপরিহার্য একটি দক্ষতা। বাবা-মায়েদের এ দক্ষতার ওপরে নির্ভর করছে মানব সভ্যতার ভবিষ্যত। তাই প্রত্যেক পিতা-মাতাদের সুদক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে এ গ্রন্থটি হতে পারে একটি মাইলফলক। মুসলিম সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সুপরিকল্পনার দারুণ অভাব চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে সন্তান লালন-পালন এবং সন্তানের ভবিষ্যত ক্যারিয়ার গঠনে প্রতিটি অভিভাবকের আকাশ ছোঁয়া আকাঙ্ক্ষা থাকলেও সময়মত সুষ্ঠু এবং সুন্দর পরিকল্পনা ও যথাযথ তত্ত্বাবধান খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না। সন্তানদের সার্বিক বিষয়গুলো অনেকটা গৎবাঁধা নিয়মে অতিবাহিত হয়, অথচ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে গেছে সমস্যার ধরন, প্রয়োজন হয়ে পড়েছে সময়োপযোগী কর্মপদ্ধতির। বর্তমানে মূল্যবোধ অবক্ষয়ের যে চিত্র, তাতে সমসাময়িক কালের প্যারেন্টিং কঠিন ও জটিল, তবে আবশ্যকীয় বিষয়। তাই প্যারেন্টিং-কে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে সমাজে ছড়িয়ে দিতে দেশ-বিদেশে পরিচালিত কর্মসূচিতে এ গ্রন্থখানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সন্তানদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বাবা-মায়ের লালিত যে স্বপ্ন- তা বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করবে এ বইটি। গ্রন্থখানি প্রত্যেক বাবা-মা, এমনকি ভবিষ্যত বাবা-মায়েদের একটি কার্যকর দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ। বিবাহ অনুষ্ঠান বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে এটিকে অবশ্যই উপহার হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা যেতে পারে।
ড. হিশাম ইয়াহইয়া আলতালিব ১৯৪০ সালে ইরাকের নিনেভার মাসুল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ হতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি আমেরিকার ইন্ডিয়ানা অঞ্চলের পুরদু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ হতে এম এস ও ১৯৭৪ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবন শুরুর পাশাপাশি তিনি উত্তর আমেরিকাতে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের কাজে অদ্যাবধি নিয়োজিত রয়েছেন। ১৯৭৫-১৯৭৭ সেশনে তিনি Muslim Students Association of the United States and Canada (MSA) এর প্রথম নির্বাচিত পরিচালক (প্রশিক্ষণ) এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি International Islamic Federation of Students Organization (IIFSO) এর মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি SAAR Foundation এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সাল থেকে তিনি International Institute of Islamic Thought (IIIT) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, পরিচালক (ফিন্যান্স) এবং ভাইস-প্রেসিডেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি এ সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত। ড. হিশাম সর্বস্তরের মানুষকে ইসলামি জ্ঞানার্জন ও তা অনুসরণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে নিয়মিত লেখালেখি করছেন। The Training Guide for Islamic Workers, Parent-Child Relations ও আলোচ্য The Dawah Covenant of Honor এর মতো জননন্দিত ও বহুল প্রচারিত বইগুলো সমাজের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, পিতা-মাতাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট গাইডবুক হিসেবে সমাদৃত।