যখন ফুলবাগানীদের বা ফুলবাগানের মালিদের কাছে যাই, প্রায়শঃই তাঁরা প্রশ্ন করেন, বাগান তো ভালো হয়েছিল, কিন্তু গাছের তো বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে পোকারা। জবা আর পয়েনসেটিয়া গাছটার ডগা-কুঁড়ির বোঁটায় কী যেন সাদা দলা দলা মতো লেগে আছে, দিন দিন বাড়ছে। গোলাপের পাতাগুলো কালো কালো দাগে ভরে গেছে, আরু কুঁড়িগুলো এক ধরনের লেদা পেকায় ফুটো করে দিচ্ছে। এরকম গাছে গোলাপ ফুল ফুটবে কী করে? যখন তাঁদের কোনো প্রশিক্ষণ ক্লাসে যাই, সেখানেও তাঁদের প্রায় একই রকম প্রশ্ন থাকে- চন্দ্রমল্লিকার ফুল ফুটবে কী করে? ওর ডগাগুলো তো কুঁকড়ে ছোট হয়ে বসে আছে, ডগায় খুব ছোট ছোট কালচে সবুজ রঙের অনেক পোকা। অনেক ভেবে শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম, এ দেশে এখন বাণিজ্যিকভাবে যেসব ফুল চাষ করা হচ্ছে, সেসব ফুলগুলোর রোগ ও পোকামাকড় সম্বন্ধে আগে লেখা দরকার। কেননা, এর সাথে ফুলচাষিদের লাভ-লোকসান জড়িয়ে আছে। এজন্য এ বইয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওলাস, ডালিয়া, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ফুলগুলোর রোগ ও পোকামাকড়। সম্প্রতি জারবেরা ও লিলিয়াম ফুলের চাষও হচ্ছে। সেজন্য এ ফুল দুটির রোগ-পোকামাকড় সম্পর্কেও এ বইয়ে লেখা হয়েছে। এ ছাড়া যারা ছোট্ট ঘরোয়া ফুলবাগানে, টবে, ছাদবাগানে এসব বাণিজ্যিক ফুল ছাড়া অন্য যেসব ফুল ও বাহারি গাছ লাগান- সেসব গাছেরও দু চারটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ ও পোকামাকড় সম্পর্কে লেখা হয়েছে। সাথে দেওয়া হয়েছে অনেক ছবি, যাতে তাঁরা সেসব রোগ ও পোকামাকড় ভালভাবে চিনতে পারেন। বইটি লিখতে গিয়ে অনেক লেখকদের বই, ওয়েবসাইট, গবেষণাপত্র ইত্যাদির দ্বারস্থ হয়েছি। তাঁদের সকলের কাছে আমার তথ্যঋণের কৃতজ্ঞতা রইলো। ধন্যবাদ জানাই এ দেশে কৃষি বিষয়ক বইয়ের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রান্ত প্রকাশনের প্রকাশক জনাব মোঃ আমিনুর রহমানকে, যিনি অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এ বইটি প্রকাশ করলেন। সত্যি বলতে কী, বইমেলায় প্রকাশের আগ্রহে ও তাগিদে বইটির কাজ খুব দ্রুততার সাথে শেষ করতে হয়েছে, সময় পেলে আরও ভালো করা যেত। এজন্য কিছু তথ্যগত ভুল থাকতে পারে। পরবর্তীতে এরকম কিছু চোখে পড়লে বা পরামর্শ পেলে সংশোধনের আশা রাখি। আমার জানা মতে, এ বিষয়ে এ দেশে আর একটিও বই নেই। তাই আশা করি ফুলবাগানী, সম্প্রসারণকর্মী, কৃষির ছাত্র-ছাত্রীদের বইটি যথেষ্ট সহায়ক হবে। পাশাপাশি গবেষকরাও গবেষণা কাজে সহায়তা পাবেন।
কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায় প্রায় তিন দশক ধরে বিভিন্ন জাতীয় পত্র-পত্রিকায় লিখছেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে এম.এসসি.এজি (উদ্যানতত্ত্ব) ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশাগতভাবে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে। সর্বশেষ অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর রয়েছে কৃষিক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার সুদীর্ঘ বাস্তব অভিজ্ঞতা ও ফসল উৎপাদনের বিশেষ পারদর্শীতা, শিক্ষকতা ও প্রশিক্ষণের দক্ষতা। এর ওপর ভিত্তি করে তিনি লিখেছেন ‘বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল’ বইটি।। কৃষি বিষয়ে তিনি ইতােমধ্যে অনেকগুলাে বই লিখেছেন। এ পর্যন্ত তাঁর লেখা ৮৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যে ৬২টি বই কৃষি বিষয়ক। কৃষি বিষয়ক লেখালেখির জন্য তিনি ২০১২ সালে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার এবং ২০১৮ সালে পেয়েছেন বাংলাদেশ একাডেমী অব এগ্রিকালচার স্বর্ণপদক।