পরকাল মানুষের চূড়ান্ত গন্তব্য। মানুষ রূহের জগত থেকে মায়ের পেট ও দুনিয়া হয়ে পরকালের শেষ গন্তব্যের দিকে প্রতিনিয়তই ধাবমান। তাদের পরকালের সফলতা ও ব্যর্থতা দুনিয়ার জীবনের কৃতকর্মের উপর নির্ভরশীল। দুনিয়াবী জিন্দেগীর আমলের আলোকেই তাদের পরকালের মূল নিবাস নির্ধারিত হবে। যেহেতু প্রত্যেকটি মানুষের দুনিয়ার জীবনে কর্ম তৎপরতার আলোকে জান্নাত অথবা জাহান্নাম নির্ধারিত হবে, সেহেতু তাদের জীবনাচারের ভালো-মন্দ নিরূপণপূর্বক তাদের যথাযথ প্রতিদান প্রদানের নিমিত্ত শতভাগ নির্ভুল ও সর্বময় ক্ষমতাসম্পন্ন একটি অতিসূক্ষ্ণ বিচারিক আদালত প্রয়োজন। সে কারণেই আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সেরূপ একটি আদালত প্রতিস্থাপন করে তাদের দুনিয়ার জীবনের সকল আমল ওযন করবেন। তিনি বলেছেন- ‘সেদিন যথার্থই পরিমাপ করা হবে’ (সূরা আ‘রাফ-৭:৮)। এরপরও কিছু লোক আখিরাতের জীবনের ব্যাপারে সংশয়ী হয়ে আছেন। আখিরাতের বিষয়ে যারা সংশয়বাদী, তারা চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। কেননা বাস্তবতা যখন তাদের ধারণার উল্টো হবে, তারা যখন মৃত্যুর পর আখিরাতের নতুন জীবনকে নিজ চোখে দেখতে পাবে, তখন কী হবে? তখন তো আর নতুন করে ঈমান গ্রহণের সুযোগ থাকবে না। তখন তাদের আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। তাই তো বুদ্ধিমান লোকেরা কখনো সংশয়ী হয় না। বরং তারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে পরিচ্ছন্ন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে নিজেকে অধিকতর নিরাপদ রাখে। সেই উদ্দেশ্যেই জনপ্রিয় লেখক ড. আবুল কালাম আজাদ (বাশার) পরকাল সংক্রান্ত আলোচনার বিভিন্ন দিক কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তুলে ধরে রচনা করেছেন অসাধারণ গ্রন্থ “অহীর আয়নায় পরকাল”। বইটিতে মৃত্যু থেকে শুরু করে জান্নাত-জাহান্নাম পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের বিস্তারিত বিবরণ রেফারেন্স সহ তুলে ধরা হয়েছে।
কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চৌদ্দগ্রাম উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে ১৯৭৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম মাে: আব্দুল হাকিম ও মাতার নাম শাফিয়া বেগম। তিনি গাছবাড়িয়া গাউছিয়া তৈয়্যবিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় শিক্ষা জীবন শুরু করেন। শুরুতে এ মাদ্রাসার হিফজুল কুরআন বিভাগে কিছুদিন অধ্যয়ন করেন। অতপর এ প্রতিষ্ঠান থেকে ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপ্ত করে ছুপুয়া ছফরিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ছফয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৯৫ ইং সনে দাখিল পাশ করে দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার দেবিদ্বারস্থ ধামতী আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। এ মাদ্রাসায় তিনি আলিম, ফাজিল ও কামিল ( হাদীছ ) অধ্যয়ন করেন। অতপর তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে বি, এ অনার্স ও মাস্টার্স সমাপ্ত করেন। তারপর ঢাকা পীরজঙ্গী জামেয়া দ্বীনিয়া থেকে দাওরাহ হাদীছ ও সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা-ঢাকা থেকে কামিল ফিকহ সমাপ্ত করেন। অতপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে ২০১৩ সনে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন। ক্লাস ওয়ান থেকে দাখিল পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। দাখিল থেকে কামিল, দাওরাহ হাদীছ, অনার্স ও মাস্টার্সহ সকল পরিক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ফাজিলে বাের্ড মেধা তালিকায় ৩য়, কামিল হাদীছে ৩য়, ফিকহে ৭ম ও অনার্সে ১৬তম স্থান অর্জন করেন। তাঁর লিখিত “মি'রাজ ও আধুনিক বিজ্ঞান”, “প্রচলিত শিরক ও তা থেকে বাঁচার উপায়” এবং “প্রচলিত বিদ'আত ও তা থেকে বাঁচার উপায়” বই তিনটি পাঠক মহলে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলা সদরের নারায়ণপুর ফাজিল মাদরাসায় আরবী প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকাস্থ তেজগাঁও মদীনাতুল উলুম কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস হিসেবে কর্মরত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি দ্বীনের দাওয়াতি কাজের ময়দানেও সমান ভাবে অবদান রেখে চলেছেন। তিনি পবিত্র হজ্জ, আন্তর্জাতিক সেমিনার ও ব্যক্তিগত সফর উপলক্ষে সৌদি আরব, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, কাতার, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও নেপাল ভ্রমণ করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি চার ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। আমরা তাঁর সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ কামনা করছি।