সৈকতে দাঁড়িয়ে সমুদ্রপারের বালক আইয়ুব বলল, কারও উপকার করে তার কাছ থেকে বখশিস বা উপহারও নিই না আমি। এই আদর্শ কোথায় পেলে? প্রশ্ন করলেন পর্যটক আবির হাসান। আমার দাদাভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছি। তোমার দাদাভাই কী করেন? তিনি অসুস্থ। পড়ে আছেন বিছানায়। তিনি হচ্ছেন একজন বড় মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ করেছেন দেশের জন্য। দেশ স্বাধীন করেছেন। যুদ্ধের সময় গুলি লেগে তার বাঁ হাত উড়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এক হাতে পার করে দিয়েছেন জীবনের এ পর্যন্ত। কথাটা শুনে কাতর হয়ে গেল আবির হাসানের ছেলে রাহাদের মন। নরম কণ্ঠে প্রশ্ন করে বসল, তোমার দাদাভাই কি পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা? শক্ত হয়ে গেল আইয়ুবের চোয়াল। কথা বন্ধ হয়ে গেল তার। অন্যরকম হয়ে গেল মুখের ভাষা। রাহাদ আবার প্রশ্ন করল, আমার প্রশ্ন শুনে মন খারাপ করেছ? হ্যাঁ। কেন মন খারাপ করল আইয়ুব? আমার দাদাভাই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। পঙ্গু নয়। কেউ তাঁকে পঙ্গু বললে কষ্ট লাগে আমার। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কষ্ট পান তিনিও। সরি আইয়ুব। বিষয়টা আমার জানা ছিল না। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য দুঃখিত। অবাক হয়ে রাহাদ তাকিয়ে দেখতে লাগল আইয়ুবকে। এত ছোট একটা ছেলে আয়-রোজগার করে, সংসারও চালায়। অথচ ঢাকায় বাসা থেকে একা বেরোতে পারে না সে। সব সময় কেউ-না-কেউ সঙ্গে থাকে। নয়তো গাড়িতে চড়ে চলাফেরা করতে হয়। সাগরপারের ছেলেটাকে মনে হল নীল সমুদ্রে ইচ্ছামতো উড়ে বেড়ানো সাদা সাদা পাখির মতো, উড়াল বালক। আর সে হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের কবিতার খাঁচার পাখির মতো ছোট্ট ফ্ল্যাটে বন্দি পাখি, ভীরু প্রকৃতির একটা বালক। তুলনা করার সঙ্গে সঙ্গে খারাপ হয়ে গেল রাহাদের মন।
তিনি একদিকে কথাসাহিত্যিক, অন্যদিকে মনোশিক্ষাবিদ। ২০১৮ সালে কথাসাহিত্যে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। জাপানের ১২তম ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব সাইকিয়াট্রির ফেলোশিপ প্রোগ্রামে নির্বাচিত হন বিশ্বের প্রথম সেরা ফেলো। জন্ম ১৯৬০ সালের ২ জানুয়ারি সাগরকন্যা সন্দ্বীপে। এমবিবিএস করেছেন সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক ’শব্দঘর’র সম্পাদক এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএমএইচ)-এর একাডেমিক পরিচালক। ২০১২ সালে তাঁর মনস্তত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থ ‘মানব মনের উদ্বেগ ও বিষন্নতা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য করা হয়।