বাজারে এলে সকল সদাই-পাতি কেনার পর, ফেরার সময় মায়ের জন্যে পান কেনার পালা। আর এই পান কিনতে এলেই পড়ি দোটানায়। দুপাশে দু'জন পান দোকানদার। দুজনের সাথেই আমার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে, মায়ের জন্য সব সময় পান কেনার সুবাদে। দেখা মাত্রই দু'জনই হেসে উঠেন, কেমন আছি জিজ্ঞেস করেন। আমি মায়ের জন্য কেমন পান কিনি, মা কি পান খায়, কি পান খায় না, সব জানে উনারা। নিয়মিত পান নিই বলে, এসব উনাদের মুখস্থ। তখন কাকে রেখে কার কাছ থেকে পান কিনবো দোটানায় পড়ি। একজনের থেকে পান কিনে অপর জনের দিকে তাকালে আমার কেমন লজ্জা লাগে। তাই আমি একদিন একজনের থেকে পান কিনলে, আরেকদিন অন্য জনের থেকে কিনি। বাজারে গেলে এভাবে নিয়ম করে মায়ের জন্য পান কিনতাম। তারপর কয়েক বছর হয়ে গেলো, একদিন মায়ের পানের বাটা অযত্নে পড়ে রইলো ঘরের এককোনায়। মায়ের পানের বাটায় অনেকটা ধুলো বসে গেছে।পুরানো জীর্ণ শীর্ণ, শ্যাওলা ধরা পরিত্যক্ত প্রাসাদের মত হয়ে গেছে মায়ের পানের বাটা। তারপর থেকে বাজারে গেলে, সেই পান দোকানদার দুজনের সাথে আমার যে আর হাসিমুখে কথা হয়না। তাদের 'কেমন আছির' উত্তর আমি হাসি মুখে দিতে পারিনা। মনে হয় এখন যেন সেই দু'জন পান দোকানদারের সাথে আমার দা-কুমড়া'র সম্পর্ক। তখন একজনের থেকে পান কিনে অন্যজনের দিকে তাকালে আমার লজ্জা লাগতো। আর এখন দুজনের দিকে তাকালে আমার চোখে জল আসে। চোখ ভিজে যায় কিছু বলতে পারিনা। এখন আমার চোখে জল আসে... চোখে জল আসে... ~ কাজী রিপন কবি ও কথাসাহিত্যিক
কাজী আমির হোসেন রিপন আপনার ঠিক পাশের বাড়ির ছেলেটা। জন্ম নোয়াখালী জেলা সেনবাগ থানার কাজির খীল গ্রামে। মাতা আনোয়ারা বেগম। এবং পিতা মুক্তার হোসেন। ১৯৯৪ সালের ২৫শে নভেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। প্রকৃত নাম মোঃ আমির হোসেন। বংশগত ভাবে তিনি কাজী বংশ। সাহিত্যে কাজী রিপন নামে সমাধিক পরিচিত। কাজী আমির হোসেন রিপন এর ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠা তাঁর নিজ বাড়ি, কালা কাজির বাড়িতেই ছোট বেলা কেটেছে। আর ছোটবেলা থেকেই তিনি গল্প, কবিতা, গান, ইসলামি সংগীত ও ছবি আঁকা পছন্দ করতেন। ছাত্র জীবন থেকেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বহু পুরুষ্কার অর্জন করেছেন। স্কুল জীবন থেকে লিখালিখি শুরু করলেও একাদশ শ্রেণিতে এসে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন। তার প্রকাশিত বইসমূহঃ • ভালোবাসার হালখাতা (কাব্যগ্রন্থ) • গ্রামের সংসদ (গল্পগ্রন্থ) • অবেলায় (কাব্যগ্রন্থ) • মায়ের পানের বাটা (উপন্যাস)