প্রাণীজগতে বুদ্ধিমত্তায় সবার ওপরে মানবজাতির অবস্থান। মানুষের বুদ্ধি, চিন্তা করার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি ও মেধা তাকে আগ্রহী করে তুলেছে, নিয়োজিত করেছে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায়। এর সফল প্রয়োগে হাজার বছরে মানবজাতি হয়ে উঠেছে চেনা দুনিয়ার নিয়ন্ত্রক। বুদ্ধিমত্তার শিখরে পৌঁছানো এই মানুষের সকল কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে তার শরীরের ছোট্ট একটি অঙ্গÑ মস্তিষ্ক। আরও অনেক প্রাণীর মস্তিষ্ক থাকা সত্ত্বেও মানবদেহের মাত্র ১.৪ কেজি ওজনের এই অঙ্গটির বিশেষ গঠন ও বিস্ময়কর ক্রিয়াকর্মই মানুষকে করেছে অন্যান্য প্রাণী থেকে ভিন্ন, দিয়েছে অনন্য কিছু ক্ষমতা। মস্তিষ্ক আমাদের দেহ আর মনের মিশন কন্ট্রোল সেন্টার। এটা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের সমস্ত জৈবিক কাজÑ শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃৎস্পন্দন থেকে শুরু করে হাঁটা-চলা, দেখা-শোনা, কথা বলার মতো দৈনন্দিন কাজ। আবার সেই একই মস্তিষ্ক থেকে প্রসূত হয় বুদ্ধিমত্তা, মেধা, আবেগ, স্মৃতিশক্তি, সৃজনশীলতা সবকিছু। একজন মানুষের জীবদ্দশায় এই কাজগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে করে যায় মস্তিষ্কের ৮৬ বিলিয়ন নিউরন আর তাদের মধ্যে ১০০ ট্রিলিয়ন সংযোগ! আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত ডিজিটাল ডাটা তৈরি হয়েছে, তার সবকিছুই একজন মানুষের একটি মস্তিষ্কেই এঁটে যাবে! এতই অকল্পনীয় এর ক্ষমতা! তাই মানব মস্তিষ্ক এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড়ো রহস্য। এই বইটিতে একদিকে মস্তিষ্কের গঠন ও কাজ সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা দেয়া হয়েছে, যেমন মস্তিষ্ক কীভাবে দেহের বিভিন্ন অংশে সংকেত পাঠায়, কীভাবে জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে। এর পাশাপাশি আবেগ, স্মৃতি, অনুভব, স্বপ্ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিকল্পনা, আমিত্ব, চেতনা ইত্যাদি বিষয়গুলো সহজভাবে আলোচনা করা হয়েছে। অন্যদিকে বইটিতে এমন কিছু বিচিত্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেগুলো থেকে বোঝা যায় জীবনের নানা জটিল ও রহস্যময় ঘটনার পেছনে মস্তিষ্কের কেমন সক্রিয় ভূমিকা আছে। লেখকের ‘সময় : বিজ্ঞান ও অনুভবে’ এবং ‘ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি’ বই দুটি দেশ-বিদেশের হাজারও পাঠককে আকৃষ্ট করেছে মহাবিশ্বের গভীর কিছু রহস্যকে জানতে, বুঝতে, অনুধাবন করতে। এবার তার '‘মস্তিষ্ক : বিজ্ঞান ও রহস্যের গভীরে’ বইটি আমাদের নিয়ে যাবে মহাবিশ্বের সবচেয়ে জটিল রহস্যের আরও গভীরে, উন্মোচিত করবে বিস্ময়কর সব তথ্য, উদঘাটন করবে চমকপ্রদ বিভিন্ন ঘটনার কার্যকারণ। প্রিয় পাঠক, নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি এই যাত্রায় সামিল হলে খুলে যাবে মনের জানালা, অন্তর্চক্ষু দিয়ে অবলোকন করা হবে মহাবিশ্বের মহাবিস্ময়।
হাসান তারেক চৌধুরী (জন্ম ২৩ মে ১৯৭০), একাধারে দুইটি ভিন্ন ঘরানায় তার সফল পদচারণা- বিজ্ঞান ও প্যারাসাইকোলজি ফিকশন। ২০১৮ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত প্রথম বই প্যারাসাইকোলজি গল্প-সংকলন ‘দ্বিখণ্ডিত’ ভাষাচিত্রের সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় স্থান করে নেয়। ২০২০ সালে প্রকাশিত হয় বিজ্ঞানবিষয়ক জনপ্রিয় বই ‘সময় : বিজ্ঞান ও অনুভবে’। বিজ্ঞানের জটিল সমস্যাগুলোকে তিনি তার বইতে ভিন্ন আঙ্গিকে গল্পে গল্পে সহজবোধ্যভাবে উপস্থাপন করেছেন। একাধিক মুদ্রণের পর সম্প্রতি বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় বিজ্ঞানবিষয়ক বই ‘ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি’। এটিও দ্রুত পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। দেশের পাশাপাশি বইগুলো দেশের বাইরেও বাংলাভাষী পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। ‘সময় : বিজ্ঞান ও অনুভবে’ কলকাতা থেকেও প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞান বইয়ের পথ ধরে তার প্যারাসাইকোলজি ও অতিপ্রাকৃত উপন্যাসগুলোও সমানভাবে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তার রচিত উপন্যাসগুলো হলো : যুগল মানব (২০১৯), প্রত্যাবর্তন (২০২১) এবং সমান্তরাল (২০২২)। একটি তারা ও হাজার চাঁদের রাত (২০১৯) তার প্রকাশিত একমাত্র কবিতার বই। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বর্তমানে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে কর্মরত রয়েছেন। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি একজন শখের ফটোগ্রাফার ও ভ্রমণপ্রিয় ব্যক্তি।