১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া নীলফামারির সৈয়দপুর রেল—কারখানা ট্র্যাজেডি—গোলাহাট ট্রেন—ট্র্যাজেডির প্রত্যক্ষ মদত দাতা সরফরাজ বাট ও তার পরিবারের আটকেপড়া পাকিস্তানি কলোনির বন্দিজীবনের আখ্যান ‘গুঙ্গি’। সৈয়দপুরের তৎকালীন মুক্তিকামী বাঙালির উপর পাকিস্তানি সেনা ও বিহারিদের বর্বর নির্যাতন ও অত্যাচারের ঘটনা ‘গুঙ্গি’ গল্পের অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মতাদর্শের মেলবন্ধনে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া, পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করা একজন যুদ্ধাহত বিহারি সরফরাজ বাট আটকে পড়া পাকিস্তানি ক্যাম্পে বন্দি হয়ে দাপুটে জীবনের তিলে তিলে অবসান, স্ত্রী মিরজানের জীবনসংগ্রাম সর্বোপরি বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরী কন্যা গুঙ্গির অবৈধ গর্ভসঞ্চার পাঠককে ভিন্ন মাত্রার ভালোলাগা এনে দিবে বলে আমি আশাবাদী। বাস্তবতার টানাপোড়েন, এক বোবা মায়ের অস্পষ্ট গোঙানি, গোঁ গোঁ চিৎকার, অস্ফুট নিনাদ শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়। বাকপ্রতিবন্ধী গুঙ্গি তার সর্বনাশের কাহিনি মুখ ফুটে কাউকেই বলতে পারেনি। সকলের সামনে শাহজাদার জন্মদাতার স্বরূপ উন্মোচন সে আজও করতে পারেনি। কোন্ সে লম্পট, যে কিনা এক নিরীহ বোবা কিশোরীর সর্বস্ব লুটে নিয়ে তার পেটে আজন্মের কলঙ্কের চিহ্ন রেখে গেছে। বোবা মা সেই আজন্মার পাপকে ধারণ করে সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে পৃথিবীর আলোতে তার উন্মেষ ঘটিয়েছে। বুকে আগলে রেখে শাহজাদাকে নিরাপত্তা দিয়েছে। নিজের জীবনীশক্তি দিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরেছে। মায়ের মমতায় পাপকে নিষ্পাপে রূপান্তর করেছে। বোবা মায়ের বুকের ধন, কলিজার টুকরা, সাত রাজার মানিক সেই নাজায়েজ অ’লাদকে অন্যত্র দত্তক দেওয়ায় গুঙ্গির গোঙানিতে বাতাস ভারী হয়ে আসে। চাঁদ—সূর্য—আকাশ সব যেন থমকে যায়। প্রতিবেশীর মনে মানবতার অনুভূতি জাগ্রত হয়। গুঙ্গির গোঙানি আর মায়ের ভালোবাসা শাহজাদাকে ফিরিয়ে আনে। বোবা মায়ের বুকের মানিক বুকে ফিরে পেয়ে গুঙ্গি শাহজাদাকে কতোক্ষণ বুকে জড়িয়ে রাখে! চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দেয়। এপাশ থেকে ওপাশ নেয় আর বারবার চুমোয়—আদরে জড়িয়ে রাখে। মা—সন্তানের এমন বাঁধভাঙা ভালোবাসা পিতার পরিচয়কে ছাপিয়ে মায়ের ভালোবাসাই জয়ী হয়।