শিল্পসাহিত্যের সকল মাধ্যমেই মানুষকে বিচিত্র ভাব ও ভঙ্গিতে নেড়েচেড়ে দেখার অভিপ্রায় উপস্থিত। তবুও জীবনের গভীরতলশায়ী অনুভব ও উপলব্ধির নির্যাসকে নিবিড়ভাবে আস্বাদন ও আত্মস্থ করতে আমরা প্রথমত কবিতার কাছে যেতে ভালোবাসি। ‘কবিতা ও জীবন একই জিনিসেরই দুইরকম উৎসারণ’—জীবনানন্দের এই উচ্চারণই কবিতা-সংশ্লিষ্ট বিশুদ্ধ মানুষের মনের কথা। কালোত্তীর্ণ কবিতা তার স্রষ্টাকেও পাঠকের সামনে মেলে ধরে। তবুও কখনো কখনো সংশয়াচ্ছন্ন হন কবি, রবীন্দ্রনাথের মতো পাঠককে মনে করিয়ে দেন, ‘তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।’ এ-কারণেই কি আমরা আধুনিক কবিদের স্বনামে কবিতায় উপস্থিত হতে দেখি? এই উপস্থিতির নিশ্চয়ই আরও অনেক কারণ আছে। এই বইয়ে ৫২ জন কবির আত্মনামে কবিতায় উপস্থিত হওয়ার কারণ চিহ্নিত করার প্রয়াস আছে। একই সঙ্গে গবেষক গ্রন্থভুক্ত কবিদের তাৎপর্যপূর্ণ প্রবণতাসমূহ অনুধাবন ও বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন। প্রাবন্ধিক পাঠকের ওপর নিজের অনুধাবন ও অভিমতকে চাপিয়ে না দিয়ে কবিতার পাঠককে সৃজনশীল হয়ে ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ চরিত্রের কবিতার নামাঙ্কিত চরণ কিংবা চরণের অংশবিশেষকে প্রবন্ধগুলোর শিরোনাম করা হয়েছে। যাঁরা নিজের নামকেই কবিতার শিরোনাম করেছেন, কবিতার ভেতর নিজের নাম না থাকায় প্রবন্ধের শিরোনামে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আলোচিত কবিতাগুলোর চৌম্বক চরণকে শিরোনাম হিসেবে বেছে নেওয়ার প্রয়াস প্রশংসনীয়। তারেক রেজা আত্মনামে কবি : কবিতার দিকে দৃষ্টিপাত শীর্ষক বইটিতে পাঠকের সঙ্গে একজন কবি ও তাঁর কবিতার সংযোগ-সম্পর্কের বিচিত্র দিকে দৃষ্টি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বইটিতে গবেষণাধর্মী বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের ব্যাপারটিকে কবিতার মতোই নিবিড় ও নান্দনিক করে তোলার চেষ্টা পাঠককে ভিন্নতর আরাম ও আনন্দ দেবে আশা করি।
"তারেক রেজা। জন্ম ৯ নভেম্বর ১৯৭৮, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলাধীন গঙ্গারামপুর গ্রামে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ২০০০ সালে স্নাতক এবং ২০০১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ২০০৮ সালে ‘সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার শিল্প-প্রকরণ’ বিষয়ে গবেষণা করে এম ফিল এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে ‘চল্লিশের দশকের চারজন কবির কবিতা : বিষয় ও প্রকরণ [আহসান হাবীব, ফররুখ আহমদ, আবুল হোসেন, সৈয়দ আলী আহসান]’ বিষয়ে পিএইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। প্রবন্ধ ও কবিতা লেখার পাশাপাশি কিছু ছোটগল্প ও নাটক লিখেছেন তিনি। মঞ্চস্থ চারটি নাটক- আজকের সমাজ, এবং তারপর, নদী ও নারীর কথা, অনন্ত তৃষ্ণা। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : পিপাসার অপর চোখ (২০০১), পুথির একাল (২০১১), জল-অন্তঃপ্রাণ (২০১৩), চতুর্দোলা (২০১৫), ছিন্নপদ্য (২০১৬), দেয়াল ভেঙে দেখি (২০১৮); প্রবন্থগ্রন্থ : কবিতা : কালের কণ্ঠস্বর (২০০৯), সুভাষ মুখোপাধ্যায় : কবিমানস ও শিল্পরীতি (২০১০), রবীন্দ্রনাথ ও কজন আধুনিক কবি (২০১২), রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধদেব এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০১২), কবিতার মন-মর্জি (২০১২), আবুল হোসেন : কবি ও কবিতা (২০১৫), আহসান হাবীব : কবি ও কবিতা (২০১৭); রূপান্তরিত গ্রন্থ : কাঠের মানুষ পিনোকিও (২০০৯, ফাদার মারিনো রিগন সহযোগে), ছন্দে ছন্দে পিনোকিও (২০১১)। সম্পাদিত গ্রন্থ : শ্রেষ্ঠ কবিতা : সমর সেন (২০১২), শ্রেষ্ঠ গল্প : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৪)। ড. তারেক রেজা বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করছেন। "