ইতালিয়ান লেখক কার্লো কল্লোদি (১৮২৬-১৮৯০) তাঁর নন্দিত শিশুতোষ গ্রন্থ চরহড়পপযরড় দিয়েই বিশ্ব জয় করেছেন। এই গ্রন্থ সারা বিশ্বের শৈশব-কৈশোর অধিকার করে আছে। বাংলাদেশের শিশুরা পিনোকিও নামক কাঠের মানুষটিকে কেবল কার্টুনের ছবির মতোই কিছু সময়ের আনন্দ হিসেবে নেড়েচেড়ে দেখছে। মানুষ শব্দটি যে গভীরতর অর্থকে ধারণ করে, কাঠের পুতুল পিনোকিও সেই অর্থবহ বাস্তবতার নানা চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করেছে। নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলেই মানুষের বেঁচে থাকা সার্থক হয়, মানুষ সত্যিকার অর্থে মানুষ হয়ে ওঠে। পিনোকিও-র জীবনে যা কিছু ঘটেছে, তার অনেক কিছুই হয়তো যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষের মন তো সব সময় যুক্তি ও বুদ্ধির দাসত্বকে স্বীকার করতে চায় না। যা কখনো হয় না, হওয়া সম্ভব নয়, তার জন্য আমাদের যে অস্থিরতা, তার একটা গুরুত্ব নিশ্চয়ই আছে। অসম্ভবের পাথার পেরুনোর সেই রূপকথার মতোই পিনোকিও-র ঘটনাবহুল জীবন। যে জীবন তার লক্ষ্য, সেই মহৎ-সুন্দর-আলোকিত-আনন্দময় মানব জীবনের স্নিগ্ধ ছায়ায় বসে পিনোকিও উচ্চারণ করেছে চিরন্তন উক্তি : সবার ওপরে মানুষ সত্য।
ফাদার মারিনাে রিগন মানবসেবায় নিবেদিত খ্রিস্ট সন্ন্যাসী। ফাদার রিগন নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। নানাগুণে গুণান্বিত মানুষটি একাধারে অনুবাদক-সমাজসেবক-কারুশিল্প উদ্যোক্তা-শিক্ষাব্রতী-স্থাপত্যশিল্পী ও মুক্তিযােদ্ধা। এক কথায় অসাধারণ এক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। ইতালির ভেনিসের অদুরে ভিল্লাভেরলা গ্রামে ১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। আট ভাই বােনের মধ্যে তিনি বাবা-মায়ের জ্যেষ্ঠ সন্তান। খ্রিস্টের মঙ্গলময় বাণী প্রচারের লক্ষ্যে ১৯৫৩ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে তার প্রথম। আগমন। কর্মসূত্রে দেশের নানা অঞ্চল ঘুরে অবশেষে স্থায়ী নিবাস গড়ে তােলেন সুন্দরবন। সংলগ্ন মােংলার শেলাবুনিয়া গ্রামে। বাংলার মাটিতে সমাহিত হওয়াই তার অন্তিম ইচ্ছা। ৫০ দশকের মাঝামাঝিতে তিনি কাজের সুবিধার্থে বাংলাভাষা শিখতে গিয়ে এদেশের সাহিত্যের প্রেমে পড়েন গভীরভাবে। শরৎচন্দ্র দিয়েই বাংলাসাহিত্যে তার প্রথম প্রবেশ। অতঃপর রবীন্দ্রসাহিত্যের সঙ্গে পরিচয়। পড়তে থাকেন রবীন্দ্রনাথের বহুমাত্রিক রচনাবলি। যত পড়েন ততই ভালাে লাগে। আর যত ভালাে লাগে ততােই পড়েন-এই ভালাে লাগা থেকেই রবীন্দ্রনাথের প্রতি নিবিড় ভালােবাসার জন্ম।। এভাবেই রবীন্দ্র-জীবনদর্শনে তিনি আপুতপ্রাণিত-মুগ্ধ।