১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃতসর জেলার জালিয়ানওয়ালাবাগের প্রান্তরে ব্রিটিশ সেনানায়ক জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল নিরীহ, নিরস্ত্র প্রায় হাজারখানেক লোককে। আহত হয়েছিল বহুসংখ্যক লোক। তারা সেই মাঠে পড়ে থেকে এক ফোঁটা জল কিংবা সেবা-শুশ্রূষার জন্য কাতর আর্তনাদ করছিল। কিন্তু তাদের কাতর আহ্বানে কেউ সাড়া দিতে পারেনি। কারণ এই ঘটনার অব্যবহিত পরেই অমৃতসরে কারফিউ জারি করা হয়েছিল। ব্রিটিশ ভারতে ১৩ এপ্রিল দিনটি একটি কলঙ্কময় দিন হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা ও বিপ্লবী ছিলেন নীরদ চক্রবর্তী মহোদয়। ব্রিটিশ কারাগারে দীর্ঘদিন বন্দি জীবনযাপন করেছিলেন তিনি। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে শিক্ষকতার বৃত্তিগ্রহণ করেছিলেন। আমি ছিলাম তাঁরই ছাত্র। ওঁর কাছ থেকেই আমি প্রথম জালিয়ানওয়ালাবাগের নারকীয় হত্যা কান্ডের কথা সবিস্তারে জানতে পারি। পরবর্তী সময়ে আমি জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনা নিয়ে পুস্তক রচনার উদ্যোগ নিই। তিনি তখন আমাকে নানা ভাবে উৎসাহিত করেছিলেন। বহুবছর আগেই তিনি ইহলোক ত্যাগ করেছেন। তাঁর স্মৃতি আমি আজও বহন করে চলেছি। এই বইটিকে সুখপাঠ্য করার জন্য আমি সরস ভঙ্গিতে শ্রদ্ধাভাজন নীরদ চক্রবর্তীর সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনাবলির আনুপূর্বিক তথ্যাদি উপস্থাপনে সচেষ্ট হয়েছি। বইটিতে মহাত্মা গান্ধির যোগদান। অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলন নিয়ে তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ১৯১৯ সালের রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে সারা ভারতে তাঁর অহিংস সত্যাগ্রহের আহ্বান। ভারতের বিভিন্ন স্থানে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ঘটনার সূত্রপাত—জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যা কান্ডের পাঞ্জাবে সামরিক শাসন জারি অমৃতসরের কুঁড়েওয়ালাগলিতে হামাগুড়ি আইনের প্রবর্তন সারাভারতে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন—কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত নাইট উপাধি বর্জন—ঘটনার তদন্তের জন্য হান্টার কমিশন গঠন—গান্ধিজির মাল্যদান—জেনারেল ডায়ারকে কমিশন কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত করা পাঞ্জাবের কুখ্যাত গভর্নর মাইকেল ও ডায়ারকে লন্ডনে গুলি করে হত্যা এইসব তথ্যাদি প্রাঞ্জল ভাষায় পরিবেশনের চেষ্টা করা হয়েছিল এই বইটিতে সহৃদয় পাঠকবৃন্দ বইটি পড়ে আনন্দ পেলে আমার শ্রম সার্থক হয়েছে। বলে মনে করব।