অ্যালেক্সিয়া জুলিয়ানা মার্সেলা লরিয়েন্টিয়েন একজন ডাচ রাজকন্যা। ‘রাজকুমারী মারিয়া এবং বৃদ্ধ নাবিক’ উপন্যাসে ঔপন্যাসিক রাজপরিবারের বাস্তব এক চরিত্রকে নিয়েছেন এবং তৈরি করেছেন কল্পনার এক রহস্যঘন আবহ। ডাচ রাজপরিবার কয়েক দিনের প্রমোদ ভ্রমণে সাগরে জাহাজ ছুটিয়েছেন। অষ্টম শতকে এই পরিবারের সম্রাট গেলন যাদের রক্তে হাত রাঙিয়েছেনÑ সেই মরিসকো বা মুর নামক জলদস্যুরা হাইজ্যাক করে মারিয়াকে। সেনেগালের গরি আইল্যান্ডে মারিয়াকে নিয়ে টাকা আর বিশ্বরাজনীতির খেলা যখন পোক্ত হচ্ছে ঠিক তখনই মারিয়াকে নিয়ে পালিয়ে যান চৌকশ নাবিক আবরার এবং একজন ঔপন্যাসিক জাওয়াদ রায়েম। তাদের সাথে ছুটে চলার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা মারিয়াকে আরও রোমাঞ্চপ্রিয় করে তোলে। মারিয়া দুই হৃদয়বান মানুষের সাথে মুক্তি আর স্বাধীনতার স্বাদ নিতে রাজপ্রাসাদে আপাতত না ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা পালাতেই থাকে পৃথিবীর অদ্ভুত সব দ্বীপ, বন্দর-শহর, বন আর মরুভূমিতে। বিভিন্ন দেশের চৌকষ সব গোয়েন্দা, সেনা-নৌ সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা পালাতেই থাকে। জীবন নতুন করে উন্মোচিত হতে থাকে কিশোরী রাজকন্যার কাছে। সে অনুভব করে রাজপ্রাসাদের কড়া আর নিয়মমাফিক জীবনের চেয়ে এমন ভবঘুরে জীবনই বড়ো আনন্দের আর আর শিক্ষণীয়ও বটে! কিন্তু এক সময় আফ্রিকার মরুতে একদল সেনা তাদের ঘিরে ফেলে। সেনাদের জালে আটকা পড়লেও বৃদ্ধ নাবিক অথবা জাওয়াদ রায়েম তথা সৈকত অবাক হয় যে, তাদের কিছু না জানিয়েই উধাও হয়েছে মারিয়া! এই অচেনা আফ্রিকার মরুতে কোথায় পালিয়েছে কিশোরী রাজকন্যা? এই উপন্যাসের প্লটকে ঔপন্যাসিক শুধু একটা রোমাঞ্চকর অভিযাত্রার গল্প হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেননি, অথবা কিশোর-কিশোরী, তরুণ বা বয়সি সকল পাঠকের জন্য রোমাঞ্চকর এক অভিযাত্রার পাঠ হিসেবে সৃষ্টি করেননি; তিনি একই সাথে তা যেন তাদের কৈশোরের আনন্দ-স্মৃতি হয়ে থাকে এবং বয়সকালে এই উপন্যাস হয়ে ওঠে তাদের এক নস্টালজিক জগৎ- সে ভাবনা মাথায় রেখেই সৃষ্টি করেছেন এই উপন্যাস। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তর, রহস্যময় প্রকৃতি বিচিত্র জাতি-গোষ্ঠী, আদিম উপজাতি এবং তাদের জীবনকে তুলে আনাই শুধু নয়, কাজী রাফির এই ধারাবাহিক উপন্যাস বিশেষত কিশোর মননকে আলোকিত করতে, তাদের জীবন-জিজ্ঞাসার স্থানটিকে স্পষ্ট করে শনাক্ত করতেও সাহায্য করবে। ‘গদ্যের যুবরাজ’ খ্যাত কাজী রাফি তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’র জন্য পেয়েছেন ‘এইচএসবিসি কালি ও কলম পুরস্কার-২০১০’ এবং ‘এমএস ক্রিয়েশন সম্মাননা-২০১০’। উপন্যাস এবং ছোটগল্পে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন ‘নির্ণয় স্বর্ণপদক-২০১৩’ এবং ‘এমএস রাহী পদক ২০১৯’।
কথাসাহিত্যিক কাজী রাফি ১৯৭৫ সালের ২২ নভেম্বর বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী রইচ উদ্দীন এবং মাতার নাম ফিরোজা বেগম। তিনি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ বগুড়া থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশনসহ কমিশনপ্রাপ্ত হন । পরবর্তীতে তিনি নিজ ইংরেজিতে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেন। ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ উপন্যাস তার লেখা প্রথম উপন্যাস। প্রথম উপন্যাসেই তিনি পাঠক এবং বোদ্ধাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ , ‘ত্রিমোহিনী’ , রূপডাঙ্গার সন্ধানে’ , ‘পাসওয়ার্ড’ , ‘রংধনুর সাঁকো’, ‘লে জোঁ নদীর বাঁকে’, নিঃসঙ্গতার নগ্ন খোলস’, অরোরার আঙুল’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । প্রথম উপন্যাস ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’র জন্য পেয়েছেন ‘এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কার-১০’ এবং ‘এম এস ক্রিয়েশন (শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ) সম্মাননা’ । উপন্যাস এবং ছোটগল্পে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন ‘নির্ণয় স্বর্ণপদক-২০১৩ ।