এই বইটি লেখা হয়েছে মনস্তত্ত্ব যে, কোনো জটিল বিষয় না সেই প্রসঙ্গটি তুলে ধরতে। মানুষের মন কিছু প্যাটার্ন মেনে চলে। সেই প্যাটার্নগুলো বোঝার জন্যই এই লেখা। আমি যদি আমার মনোজাগতিক সীমাবদ্ধতাকে চিহ্নিত করতে পারি, তা হলে অন্যের দিকেও আঙুল না তুলে অপরের অনুভবের, চিন্তার, আচরণের সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিতে পারব। কাউন্সেলিং মানে উপদেশ দেওয়া বা আমি ঠিক বলছি, তুমি ভুল করছ এ ধরনের জাজমেন্টাল মন্তব্য করা নয়। প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা আছে হয় উপদেশ দেওয়া, নয়তো চুপ করে কথা শুনে যাওয়া মানেই কাউন্সেলিং। এই বইতে যতটুকু সম্ভব সহজ বাংলা ব্যবহৃত হয়েছে। উদ্দেশ্য এই বইটি যেন একজন মাধ্যমিক পাস না করা ব্যক্তি থেকে শুরু করে একজন অতি উচ্চ শিক্ষিতর চিন্তার খোরাক জোগায়। আবার একজন মনস্তত্ত্বের পেশাজীবী পাঠক যদি আরেকটু গভীরে ঢুকতে চান তাঁর জন্য তথ্যসূত্রে বিষয়ভিত্তিক ইঙ্গিত আছে। ঠিক যেন একাডেমিক না হয়েও অনেকটা সেমি একাডেমিক একটা স্বাদ যোগ করার প্রয়াস। মোদ্দা কথা, প্রত্যেকটি মানুষেরই চিন্তার দক্ষতা আছে। সেই দক্ষতার জায়গাটিকে উসকে দেওয়ায় যাদের আগ্রহ আগ্রহ আছে, তারাই এই বইটি পড়বেন।
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া পেশায় চিকিৎসক হলেও তাঁর প্রথম নেশা মনস্তত্ত্ব। মনোজাগতিক ক্যানভাসে মস্তিষ্কের নিউরনের সাথে অনুভূতির সংযোগ খোঁজেন মুগ্ধ চিত্তে। তাঁর আরেকটি নেশা ভলান্টিয়ার কাজ করা। পাহাড়ে কিংবা সমতলে, আদিবাসী কিংবা বাঙালি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে এই কাজ করাকে তিনি মনে করেন আসলে প্রান্তিকদের জন্য নয়, নিজের মনোজগতিক সতেজতা বজায় রাখার জন্যই করেন। কারণ স্বাস্থ্যর চারটি ভাগ আছে। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য। এই প্রতিটি স্বাস্থ্যর যত্ন করা সম্মিলিতভাবে একজন মানুষের ভালো থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। সেই ধারাবাহিকতায় মনোসামাজিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তিনি ফিনিক্স নামে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি গ্রুপ খুলেছেন। যেখানে মানুষ অকপটে মনের কথা বলবার প্রক্রিয়া চর্চা করেন। সেই গ্রুপের আপ্ত বাক্য হলো, 'We are not independent we are interdependent.' তিনি বিশ্বাস করেন প্রতিটি মানুষ জীবন যুদ্ধে কখনো না কখনো রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতন পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই ছাই থেকে আবার 'আপনা মাঝে শক্তি ধরে' নতুন জন্ম নেয় সেই মানুষটির নতুন এক সত্তা। মানুষটি তখন নিজের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে হয়ে যান একজন ঝলমলে ফিনিক্স। এটি কিন্তু প্রতিটি মানুষের জীবনে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত একটি চলমান প্রক্রিয়া। 'কম টেস্টোস্টেরন ও মনোদৈহিক প্রভাব', 'স্ট্রেস', 'স্থূলতার মনোদৈহিক প্রভাব ' নামে তাঁর বই আছে।