১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ একক শক্তির যুদ্ধ নয় বিবিধ শক্তির যৌথ সংগ্রামের বিবরণ। একাত্তর একাধিক ইতিহাস ধারণ ও সৃষ্টি করে। এই বিবিধ শক্তির সংঘর্ষ জন্ম দেয় প্রতিষ্ঠা এবং তার সঙ্কট। ইতিহাস সৃষ্টি হয় হাজারো টিকে থাকার বেঁচে থাকার, জয়ী হবার আকাক্সক্ষা ও একই সাথে বহু পরাজয়ের অবধারিত্বের ধারাবাহিকতা ও এই উপন্যাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাসমূহ, সত্তর দশকের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জটিলতা, বিত্তকরণ প্রক্রিয়া, রুজির সংগ্রাম, দুর্বৃত্তায়ন, এবং ইতিহাসের বিবর্তনের বর্ণনা দেয়া চেষ্টা হয়েছে। কাহিনী গড়ে উঠেছে দুই মানুষের ইতিহাসের ব্যক্তিগত জীবনের ইতিহাসের বর্ণনায় যেটার সূত্র দেশের ইতিহাস। একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধার জীবনের পটভূমি যুদ্ধ ও পরবর্তী জীবনের জটিলতা ও সংগ্রাম, সাহস ও আপোষের বিবরণ। তার জীবনের সাথে যুক্ত হয় মুম্বাই থেকে ব্যক্তিগত জীবন সংগামে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পালিয়ে আশা এক বয়স্ক পারসী মানুষের সাথে যার প্রধান বাস্তবতা নিজের ইতিহাস ওজস্বীকার করা, অথচ যে রুজি করে ইতিহাসের পণ্য-আঁটিক্স-বিক্রি করে। উপন্যাসটি ইতিহাসের সূত্রের সন্ধানী দুই মানুষের কথা যারা অজান্তেই shondhan করে বাংলাদেশের ইতিহাসের বর্তমান চেহারা নিজেদের জীবনের ইতিহাসের মধ্যে।
আফসান চৌধুরী চার দশকের অধিক সময় ধরে। 'একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে কাজ করছেন। তিনি হাসান হাফিজুর রহমানের অধীনে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র' প্রকল্পের একজন গবেষক ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নির্মিত চার খণ্ডের। ‘বাংলাদেশ একাত্তর’ (২০০৭) বইগুলাের সম্পাদক ও সহ-রচয়িতা ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের সাক্ষাঙ্কার সংগ্রহ' (২০১৮) এবং গ্রামের জনগােষ্ঠীর একাত্তরের অভিজ্ঞতার ওপর গ্রামের একাত্তর' (২০১৯) বই দুইটি সম্পাদনা করেন ২০২০ সালে তিনি হিন্দু জনগােষ্ঠীর একাত্তর’ এবং ১৯৭১ গণনির্যাতন-গণহত্যা কাঠামাে, বিবরণ ও পরিসর’ গ্রন্থ দুইটি সম্পাদনা করেন। ১৯৭১ নিয়ে আফসান চৌধুরী বিবিসির জন্য ৫টি রেডিও ডকুমেন্টারি এবং তাহাদের যুদ্ধ' (২০০১) ও গ্রামের মুক্তিযােদ্ধা' (২০১৯) নামে দুইটি ভিডিও ডকুমেন্টারি ' নির্মাণ করেছেন। ২০২০ সালে তিনি একাত্তরের নারীযােদ্ধা’সহ তিনটি ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেছেন ' একই বছরে তার লেখা ‘বাংলাদেশ ও শেখ মুজিব। '(১৯৩৭-১৯৭১)' গ্রন্থটি প্রকাশ পায়। ২০২১ সালে প্রকাশের জন্য তিনি মুজিবনগর : কাঠামাে, কার্যবিবরণ ও অভিজ্ঞতা, মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরতে ‘একাত্তরপিডিয়া’ এবং নারীর একাত্তর’ গ্রন্থ তিনটি সম্পাদনা করছেন। সাংবাদিকতা ও গবেষণার পাশাপাশি তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।