২০২৪ সালের একুশের বই মেলায় মোঃ জাকির হোসেন মুন্সী রচিত “একুশের একুশ’’ কাব্য গ্রন্থটি স্বল্প পরিসরে চমৎকার বর্ণ বিন্যাশ, শব্দের ব্যবহার প্রতিটি পদ্য একটি নির্দিষ্ট চরণ ও বর্ণ সীমায় আটকে দিয়ে ছন্দ ও বস্তুনিষ্ঠ কবিতা উপহার দিয়েছেন। সজাগ দৃষ্টিও দিয়েছেন প্রতিটি কবিতার নাম করনের দিকেও । আমাদের ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতার বীজ বপন শুরু হয় । এ থেকেই দিনে দিনে স্বাধীনতার সংগ্রাম বেগবান হয়। অবশেষে ৭১’র স্বাধীনতার যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে পেয়েছি স্বাধীনতা আর এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল শহীদদের উদ্দেশ্যে রচিত এ কাব্য গ্রন্থ। এ গ্রন্থে সাতজন বীর শ্রেষ্ঠকে স্মরণ করে প্রতিটি কবিতার শিরোনাম সাত বর্ণে রচিত এবং ৫২’সালের ফেব্রুয়ারীর ২১ তারিখে ’’রাষ্ট্রোভাষা বাংলা চাই’’ দাবীতে মিছিলে পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের স্মরণে প্রতিটি স্তবক ২১ বর্ণে ও প্রতিটি কবিতা ২১ চরণে রচনা করেছেন। বাংলা ভাষায় একুশকে বিভিন্ন দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যেমন আমারা একবিংশ শতাব্দী পার করছি-এ দিকে লক্ষ্য রেখে গ্রন্থটিতে মোট ২১টি কবিতায় সাজানো হয়েছে এবারের একুশের বই মেলা। তাছাড়া গাণিতিকভাবে কতটি চরণ ব্যবহার করা হয়েছে বা যুক্তবর্ণ মিলে কতটি বর্ণ এ গন্থে আছে হিসাব কষে বলা যায়- কাব্য গ্রন্থে মোট [২১২১] = ৪২১টি চরণ ও যুক্তবর্ণ মিলে মোট [২১৭২১] = ৩০৮৭টি বর্ণের ব্যবহার করা হয়েছে। এ কাব্যগ্রন্থে প্রতিটি কবিতা একুশ চরণে, চরণ সপ্ত বর্ণে, স্তবক একুশ বর্ণে রচিত। বাংলা ভাষায় কার্শিমা বা কৌশণপূর্ণ গাণিতিক ব্যবহার সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তার এ অনবদ্য সৃষ্টি “একুশের একুশ’’ । চমৎকার শব্দের ব্যবহার, শ্রুতি মধুর ছন্দেরও যথেষ্ট মিল পরিলক্ষিত হয়েছে এ গ্রন্থের কবিতায়। একবিংশ শতাব্দীর কৌশলপূর্ণ এ কবিতা সত্যিই অন্যতম ও ব্যতিক্রম ধর্মী এক অনন্য কাব্য গ্রন্থ। আমি এ ধরনের কাব্য গ্রন্থ রচনার জন্য তার উত্তরোত্তর মঙ্গল কামনা করছি।
প্রখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক মোঃ জাকির হোসেনের জন্ম ১৯৬৭ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি। পিরোজপুর জেলার অন্তর্গত ভাণ্ডারিয়া থানার এক ছোট্ট গ্রাম তেলিখালীতে আবদুল এবং সুফিয়া বেগমের ঘরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা খরস্রোতা কচা নদী কতবার যে তেলিখালীর উপর ভাঙনের থাবা বসিয়েছে তার হিসাব নেই। কিন্তু গ্রামের মানুষ কচা নদীর এই ভাঙন ভাঙন খেলার সাথে যুদ্ধ করেই বেঁচে আছে। আর শৈশব থেকেই মানুষের এই জীবনযুদ্ধের সাক্ষী মোঃ জাকির হোসেন। একদিকে গ্রামের সবুজ শ্যামল প্রাকৃতিক রূপ, অন্যদিকে নদী ভাঙনের ভয়াবহতা, দুয়ে মিলে তার মনের মধ্যে আলোড়ন তুলেছিল, যা তার লেখক সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলে। মোঃ জাকির হোসেনের বইগুলোতেও তাই পাওয়া যাবে তার গ্রামীণ জীবনের ছাপ। কিশোর বয়স থেকেই সাংবাদিকতা, লেখালেখি আর ফটোগ্রাফির প্রতি ঝোঁক তৈরি হয় তার, প্রচণ্ডরকম ভ্রমণপ্রিয়ও ছিলেন। ভ্রমণরত অবস্থায় প্রকৃতির সাথে সাথে লেখক মনের সংযোগ ঘটতো, যা তাকে সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করে। ১৯৯০ সালে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় চাকরি শুরু করবার মাধ্যমে সাংবাদিকতা জীবনের সূচনা করেন তিনি। এরপর থেকেই নিরন্তর লিখে চলেছেন এই লেখক। কিশোর উপযোগী গল্প, সায়েন্স ফিকশন, নাটক, থ্রিলার, অ্যাডভেঞ্চার, আত্মোন্নয়নমূলক গ্রন্থ- এগুলোই মূলত প্রাধান্য পেয়েছে মোঃ জাকির হোসেন এর বই সমূহতে। তবে উপন্যাস লেখাতেও তিনি সিদ্ধহস্ত এবং বেশ কিছু কিশোর উপন্যাসও রয়েছে মোঃ জাকির হোসেন এর বই সমগ্রতে। ‘ইংলিশ বিচিত্র’, ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’, ‘ড্রাকুলা’, ‘এক্সট্রা টিকেট’, ‘গ্রহান্তরি কিশোর’, ‘ভয়ঙ্কর প্রেতাত্মা’, ‘মুক্ত মনের কথা’ ইত্যাদি তার জনপ্রিয় রচনা।