ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের নাম এক অবিস্মরণীয় স্বাতন্ত্রে চিহ্নিত। সীমান্তের অপরপারে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে নয় বরং পৃথিবীর দুর্জয় অথচ ঘৃণ্যতম হানাদার পাক বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র চল্লিশ মাইল দূরে চারিদিকে শত্রুবিষ্টিত অধিকৃত এলাকায় এক মুক্তিকামী তরুণ আবুদল কাদের সিদ্দিকী পরবর্তীকালে যিনি ‘টাইগার সিদ্দিকী’ নামে বিশ্ববিখ্যা্ত হয়েছেন তিনি দেশের মাটিতে জনগণের মধ্যে অবস্থান করে স্বীয় অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস, অভূতপূর্ব রণনীতি ও রণকৌশল এবং বিরল সামরিক প্রতিভাবলে গড়ে তুলে ছিলেন সতেরো হাজার সুদক্ষ মুক্তিযোদ্ধা ও সত্তর হাজার স্বেচ্ছাসেবকের এক বিরাট ও বিশাল বাহিনী; তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন মুক্তাঞ্চলের চল্লিশ লক্ষ মানুষকে প্রকৃতপক্ষে পরিণত করেছিলেন এক একজন দেশপ্রেমিক মুক্তি যোদ্ধায়, অসংখ্য যুদ্ধে মোকাবিলা করেছিলেন বহু বহুগুণ বেশি শক্তিশালী ও সর্বাধনিত অস্ত্র সজ্জিত বর্বর হানাদার বাহিনীর সঙ্গে.. যাঁর নাম শুনে সেই দুঃসহ রক্ত ঝরাদিনগুলোতেও আঁতকে উঠতো রক্ত পিপাসু দস্যুরা, এমনকি যাঁর অসাধারণ রণনৈপূণ্যর ফলে মিত্রবাহিনীর পক্ষে ঢাকা শহরের পতন ঘটাতে তাঁদের পরিকল্পিত সময় ও পথের পরির্তন ঘটেছিল সেই টাইগার সিদ্দিকীর লেখনীতে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিনটি থেকে শেষ অধ্যায় পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনার বিশদ বিবরণ বিবৃত হয়েছে। ‘আমি যদি হুকুম দিবার না পারি তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পোড়ো’ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের আহবান বাস্তবে রূপ দিয়েছিল যে ‘কাদেরীয়-বাহিনী’ তাদেরই প্রাণপ্রিয় সর্বাধিনায়ক বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের কিংবদন্তীর মহানায়ক ‘টাইগার সিদ্দিকীর রোমাঞ্চকর অথচ বস্তুনিষ্ঠ কাহিনী এই বইএর পাতায় পাতায় বিবৃত।
সূচিপত্র এক : সামনে জনযুদ্ধ, চাই সশস্ত্র প্রস্তুতি দুই : প্রথম অভিযান তিন : সংযোগ সন্ধানে চার : চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাঁচ : প্রথম শিবির ছয় : ই. পি. আর-দের সন্ধানে সাত : প্রথম রিক্রটিং আট : চারানে সফল গেরিলঅ অপারেশন নয় : প্রথম প্রশাসনিক বিন্যাস দশ : সাংগঠনিক তৎপরতা এগার : শপথ অনুষ্ঠান বার : বল্লার যু্দ্ধ তের : থানা দখল চোদ্দ : দলীয় শৃঙ্খলা বিধান পনের : প্রথম হেডকোয়ার্টার ষোল : ভারতের সাথে প্রথম যোগাযোগ সতের : প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস আঠার : ঝটিকা আক্রমণ পরিকল্পনা উনিশ : বন্দি বিনিময় কুড়ি : রাজকারদের আত্মসমর্পণ একুশ : বহেরাতলীতে বিভ্রান্তি বাইশ : অস্ত্রবোঝাই জাহাজ তেইশ : মাকড়াই যুদ্ধ চব্বিশ : ভারতে যাবার সিদ্ধান্ত পঁচিশ : ছত্রভঙ্গ ও বিশৃঙ্খল মুক্তিবাহিনী পুনর্গঠিত ছাব্বিশ : ভারতে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ-শিবির সাতাশ : জোনাল কাউন্সিল আটাশ : দেশে ফেরা প্রস্তুতি উনত্রিশ : স্বদেশে সূর্যোদয় ত্রিশ : ছ্দ্মনামে একত্রিশ : বিছিন্ন অবস্থার অবসান বত্রিশ : অপারেশ ট্রায়ো তেত্রিশ : হেডকোয়ার্টার অভিমুখে চৌত্রিশ : মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন পঁয়ত্রিশ : ব্লো সেভেনটিন ছত্রিশ : বাথুলীর যুদ্ধ সাঁইত্রিশ : দালালদের অপকীর্তি আটত্রিশ : ভারতে মুক্তিযোদ্ধ প্রতিনিধি দল উনচল্লিশ : এলাসিন ঘাটে বিপর্যয় চল্লিশ : পন্নীদের বিচার : আকালুর অকাল একচল্লিশ : ছত্রীসেনা অবতরণ পরিকল্পনা বিয়াল্লিশ : ব্যাপক আক্রমণের প্রস্তুতি তেতাল্লিশ : টার্গেট টা্ঙ্গাইল চুয়াল্লিশ : ঢাকা চলো পঁয়তাল্লিশ : আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ ছেচল্লিশ : শত্রুমুক্ত ঢাকার প্রথম জনসখভা সাতচল্লিশ : টাংগাইলে জেনারেল অরোরা আটচল্লিশ : আশা-আশঙ্কায় নতুন বছর উনপঞ্চাশ : আনন্দ-বিস্ফোরণ পঞ্চাশ : বঙ্গপিতার সা্ন্নিধ্যে একান্ন : নব অধ্যায়ের সূচনা
(জন্ম: ১৯৪৭) ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাঘা কাদের নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সমরনায়ক, যিনি ভারতীয় বাহিনীর সাহায্য ব্যতিরেকেই ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে ঢাকা আক্রমণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। তাঁর পূর্ণ নাম আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। তাঁকে বঙ্গবীর নামেও ডাকা হয়। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বাহিনী কাদেরিয়া বাহিনী তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ও পরিচালিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য তাঁকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়।