চোরকুঠুরি একটি উপন্যাস। দুই খণ্ডে সমাপ্ত উপন্যাসের প্রথম খণ্ড এটি। একটা উপন্যাসে নানাবিধ চরিত্র থাকে। একেকটি চরিত্রের মানসিকতা, আচার-আচরণ, জীবনযাপন পদ্ধতি একেক রকম। এমনই বিচিত্র সব মানুষের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই উপন্যাসের পটভূমি। চোরকুঠুরি উপন্যাসের মূল চরিত্র কাজল নামের নয় বছর বয়সী একটি ছেলে, যার পুরো জগতটা জুড়েই রয়েছে তার মা; তার প্রিয় গ্রাম ছবিপুর, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কাকচক্ষু জলের ছোট্ট নদী ডাহুকী, নদীর বুকে গোধূলি-সন্ধ্যা, সূর্যডুবি, নদীর ওপারের চরে ধবল কাশের বন আর বকের ওড়াউড়ি- এ সবকিছুকে ঘিরেই তার মনোজগৎ। ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে সে, সেইসাথে তার চেনা জগতটা মনের ভেতরে এমনভাবে স্থান করে নেয় যেন তার অনুভূতিতে স্থির পোর্ট্রেট হয়ে গেঁথে থাকে। উপন্যাসের আরেকটি বিষয়বস্তু হলো একান্নবর্তী পরিবারের মানুষগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক। একান্নবর্তী পরিবারের প্রতিটি মানুষ একে অন্যের সাথে যেন একই সূত্রে গাঁথা। দুঃখ পাক কিংবা আনন্দ, হাসি আসুক কিংবা কান্না, রাগ হোক কিংবা বিরাগ- এ সবকিছুতেই একজন আরেকজনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকে। যে যত দূরেই যাক না কেন, একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। একক সত্তা থেকে বহুসত্তার মাঝে বিলীন হবার যে আনন্দ, তা পুরোমাত্রায় অনুভব করে এই মানুষগুলো। একটু একটু করে যে ছেলেটি কিংবা মেয়েটি বড় হয়ে যায়, তারও শিশু কিংবা কিশোরবেলার হাজারো স্মৃতি জমে থাকে একান্নবর্তী পরিবারের কোণে কোণে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এই উপন্যাসটিতে। সেটা হলো দুইজন নারী রূপা ও মালিহা এবং তাদের দু’জনের একই ধরণের মানসিক সংগ্রাম। অঢেল সম্পদের অধিকারী হয়েও মানসিকভাবে নিঃসঙ্গ এই দুই নারীর জীবনযুদ্ধের উপখ্যান এ বইটি। তাদের ভালোবাসা, পাওয়া না পাওয়াগুলো নিজেদের ভেতরেই গুমরে গুমরে কাঁদে। তারা ভিতরে ভিতরে ভাঙে, অথচ প্রবল আত্মসম্মান আর দৃঢ় মনোবলের জন্য পাহাড়ের মতো অটল দাঁড়িয়ে থাকে। বাইরে থেকে তাদের ভেতরের অবস্থাটা কখনও কেউ বুঝতে পারে না। তবে তারা দু’জন দু’জনের উপর মানসিকভাবে বড় বেশি নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। এর বাইরেও অসংখ্য চরিত্র ও তাদের বিচিত্র জীবনাচরণ তুলে ধরা হয়েছে এই উপন্যাসে। প্রত্যেকটি মানুষ তাদের জীবনের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা ও বিভিন্ন মুহূর্তের অনুভূতিগুলোকে অত্যন্ত সযতনে তাদের মনের ছোট্ট চোরকুঠুরিতে ধরে রাখে। কখনও কোনো নির্জন ক্ষণে কিংবা একান্ত অবসরে যে কেউ তার মনের চোরকুঠুরিতে ডুব দিয়ে ফেলে আসা দিনগুলোর বিভিন্ন মুহূর্তের ভালোলাগা কিংবা বিচিত্র ঘটনার নির্যাস আস্বাদন করতে পারে। এরকম বিভিন্ন বয়সী এবং নানান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষকে একই ফ্রেমে তুলে ধরা হয়েছে এই উপন্যাসে। তাদের জীবনের ফেলে আসা দিন আর চলমান বর্তমানের নানা ঘাত-প্রতিঘাত নিয়েই এগিয়ে যায় উপন্যাস- চোরকুঠুরি।
জন্ম ১লা এপ্রিল, ১৯৭৪; বরিশাল জেলার জাগুয়া গ্রামে। কীর্তনখোলার তীর ঘেঁষে সবুজ শ্যামল গ্রামীন পরিবেশে বেড়ে ওঠা। শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন ঢাকায় কাটালেও গ্রামের প্রতি রয়েছে তাঁর প্রগাঢ় আকর্ষণ। গাঁয়ের মেঠোপথ, সবুজ বনানী আর কীর্তনখোলার ধূ-ধূ বালুচরে পার করা শৈশবের দুরন্তপনার দিনগুলো সময় অসময়ে তাঁকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। তাইতো তাঁর লেখনিতে বারবার উঠে এসেছে গাঁয়ের কথা, নদীর কথা; বহুমাতৃক জীবনালেখ্য তথা গ্রামীন জনজীবনের গল্পগাঁথা। প্রকাশিত গ্রন্থসমূহঃ উপন্যাস ‘ধূসর গোধূলি’ (২০১৬), মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ‘একাত্তরের বিদেশি সুহৃদ : দুঃসময়ের সারথি’ (২০২২), উপন্যাস ‘ফেরা’ (২০২৩), গল্প সংকলন গ্রন্থ ‘নৈঃশব্দ্যের নিনাদ’ (২০২৩), উপন্যাস ‘চোরকুঠুরি প্রথম খণ্ড’ (২০২৪), গল্প সংকলন গ্রন্থ ‘নীল জোনাকির গল্প’ (২০২৪), কিশোর উপন্যাস ‘নিঝুমপুরে একরাত্রি’ (২০২৫), গল্প সংকলন গ্রন্থ ‘রুপালি ছায়াবীথি’ (২০২৫), অণুকাব্য গ্রন্থ ‘অনুপদী’ (২০২৫) প্রকাশের তালিকায় রয়েছে আরও একাধিক গ্রন্থ- উপন্যাস ‘চোরকুঠুরি ২য় খণ্ড’ কাব্যগ্রন্থ ‘মগ্ন চৈতন্যের কাব্য’ উপন্যাস ‘সুখপাখি’ ও উপন্যাস ‘তিন অধ্যায়’ একক গ্রন্থ ছাড়াও বিভিন্ন সাহিত্য সংকলন গ্রন্থে তার বেশকিছু গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ও ভ্রমণ কাহিনি স্থান পেয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা ও বাংলা ব্লগে লেখালেখি করছেন। ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে লেখক একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে দীর্ঘদিন চাকুরিরত ছিলেন। বর্তমানে নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনার কাজে নিয়োজিত।