বিশ্বনবীর অনেক স্থানে কোরআন শরীফের আয়াত উদ্ধৃত করা হইয়াছে। মূল আরবি আয়াত না দিয়া শুধু বাংলা তরজমা দিয়াছি। সেই সব তরজমার কোনো কোনো স্থানে আল্লাহ সম্বন্ধে 'আমরা' (বহুবচন) ব্যবহৃত হইয়াছে। যেমন: "এবং যে কেহ এই দুনিয়ায় পুরস্কার চাহে, তাহাকেও আমরা তাহাই দিব এবং যে কেহই পরকালের পুরস্কার চাহে, তাহাকেও আমরা তাহাই দিই। আমরা কৃতজ্ঞদিগকে পুরস্কৃত করিব। এখানে 'আল্লাহ্'র পরিবর্তে 'আমরা' সর্বনামের ব্যবহার দেখিয়া অনেক পাঠকের মনেই প্রশ্ন জাগে। তাঁহারা ভাবেন আল্লাহ্ এক অদ্বিতীয় ও লা-শরীক; কাজেই তাঁহার সম্বন্ধে 'আমরা' (বহুবচন) ব্যবহার করা যাইতে পারে না। তাই অনেকের ধারণা ইহা তরজমার ভুল। কিন্তু তরজমায় কোনো ভুল হয় নাই। তরজমা ঠিকই আছে। অন্য এক গূঢ় কারণে 'আমি' স্থলে 'আমর' লিখিতে হইয়াছে। আরবী ভাষায় সম্মানীয় ব্যক্তিদিগের বেলায় বহুবচন ব্যবহৃত হয়। ইহাকে সম্মানার্থে 'বহুবচন' বলে। অন্যান্য ভাষাতেও এইরূপ বাক-রীতি প্রচলিত আছে। কোনো রাজকীয় ঘোষণায় সম্রাট, সম্রাজ্ঞী বা রাষ্ট্রপতি উত্তম পুরুষের বহুবচন (আমরা) ব্যবহার করেন; দৃষ্টান্তস্বরূপ মহারাণী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্রে (Queen's Proclamation) উল্লেখ করা যাইতে পারে। সেখানে We ব্যবহৃত হইয়াছে। বলা বাহুল্য, এই রীতি কোরআন শরীফের নিজস্ব। আল্লাহ্ নিজেই এই বাচনভঙ্গি শিক্ষা দিয়াছেন; 'আমি' না বলিয়া 'আমরা' বলিয়াছেন। কাজেই তরজমায় ভুল হইয়াছে পাঠক যেন সেইরূপ মনে না করেন। মূলে বহুবচন আছে বলিয়াই তরজমাতে বহুবচন আসিয়াছে। উপরের আয়াতের ইংরেজি তরজমাতেও এই রীতি আছে।