অনি আর মেঘাগমপ্রিয়। দারুণ বন্ধুত্ব দুজনের, ভালোবাসাও ভীষণ। কিন্তু বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার পথে দেখা হয় কিছু অবিশ্বাস আর বাস্তবতার নিরিখে সামাজিক স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে। বাস্তবতার কাঠিন্য বড় না ভালোবাসা? খুবই পুরনো প্রশ্ন, তবে জবাব মেলে না কোথাও। বাস্তববাদী অনির কাছে ভালোবাসা কেবলই নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের কাছে বড্ড ফিকে। সেই স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য অনির একপাক্ষিক হঠকারী সিদ্ধান্ত, এককেন্দ্রীক ভাবনা, প্রবল উচ্চাকাঙ্ক্ষা আবেগপ্রবণ মেঘাগমপ্রিয়কে পৌঁছে দেয় লাশকাটা ঘরের চিকন স্ট্রেচারে হৃদপিণ্ডবিহীন বেওয়ারিশ এক তরুণী করে। নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী, কবি ও গল্পকার স্যার হাইজেন বার্গ এর ভাষায় বলা যায়, "প্রেম হলো জোনাকির গোপন আলোর মতো অবিরাম অন্তহীন খেলা এবং এক রহস্যময় দ্যুতি, যার ঘ্রাণ নিতে নিতে চলমান শিরায় শিরায় এঁকে দিয়ে যায় মানব জীবনের তীব্র অনুভূতি।” আর সেই আর্তিতেই যেন মেঘাগমপ্রিয় অনিকেই খুঁজেছেন শেষ পর্যন্ত — "অনি, শুনতে পাচ্ছো কি, বৃষ্টির জলটুপটুপ শব্দ কিংবা আদপে আমার সমস্ত নিঙড়ে কেবলই তোমাকে হারাবার সুর, যেন বিটোফেনের পিয়ানোয় পিয়ানো সোনাটা নং ফোরটিন ইন সি সার্প মাইনর? অন্যদিকে কর্মজীবি তারান্নুম খান। নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিশ্রমী ও দক্ষ কর্মী। অফিসের সবাই তাঁকে পছন্দ করেন, ভালোবাসেন, সম্মান করেন। আর তাঁর বস তাঁকে সারাক্ষণ তুলোধুনোর উপর রাখলেও আদপে স্নেহ করেন প্রচন্ড নির্ভরতা ও আস্থায় তারান্নুম খান এর সাফল্য দেখতে চেয়ে। সেই চাওয়াকে "দ্যা বস ইজ অলওয়েজ রাইট" ভেবেই যেন তারান্নুম খান কেবলই খাবি খান দিনের সমস্ত কাজ ঠিকঠাক করতে পারার চাপ নিয়ে। হিসেবের ছক কষে আর হিসেব মেলাতে দিন শেষে তারান্নুম খানের ঝুলিতে জমা হয় টুকরো টুকরো গল্পের মিছিল। যে মিছিল স্মৃতি হয়ে নব উদ্যোগে প্রেরণা যোগায় আরও আরও পথ হেঁটে-দৌঁড়ে ভাবনার খোরাক নিয়ে যে, মানব সৃষ্ট এই চলমান শোষণের সিস্টেমটা কেমন? মানব জীবনের সার্থকতাও বা কোথায়? জীবন কি শুধু আয়-রোজগার করে বেঁচে থাকা? নাকি জীবনের অর্থ বিশাল? এরকম দুইটি ভিন্ন স্বাদের গল্প নিয়ে "দ্বিভুজ” সাজিয়েছেন ইসরাত জাহান। ইতিমধ্যেই তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থ ও একটি গল্পগ্রন্থ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। আশা করি এই গল্পগ্রন্থটিও পাঠকপ্রিয়তা পাবে স্বকীয়তায়। "দ্বিভূজ" যাপিত জীবনের রোজনামচার পাশাপাশি মনস্বত্ত্বাত্তিক জটিলতা নিয়েও ভাবাবে। যে ভাবনা কিনা নিজেকেই তুলে দেয় নিজের হাতে লাশকাটা ঘরে নিজেরই ব্যবচ্ছেদ করতে এবং অনেকের কাছে প্রশ্ন রেখে যেতে। যার উত্তর পাঠক খুঁজে নেবেন নিজের মতো করেই।
ইসরাত জাহান। ঢাকাতেই বসবাস। পৈত্রিক বাড়ি পাবনা জেলার ইশ্বরদী থানার পাকশীতে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একজন উন্নয়নকর্মী হিসেবে। লেখালেখির শুরু ছোটবেলা থেকেই। লিখেছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অন্যান্য মাধ্যমে। প্রকাশিত হয়েছে চারটি একক কাব্যগ্রন্থ (তোমার কাছেই ফেরা, আমার আছ তুমি, ভাঙা চশমায় ভাঙলো মন এবং নির্জনে)। 'নির্জনে' তাঁকে এনে দেয় আলাদা পরিচিতি। " মৃন্ময় জীবনের বিজন সন্ন্যাস" তাঁর পঞ্চম বই হলেও প্রথম গল্পগ্রন্থ। তিনি বিশ্বাস করেন, ভালোবাসার উল্টো দিকে ভালোবাসাই থাকে।