তার কবিতায় প্রকৃতির সূক্ষ্ম তরঙ্গে মানুষ জীব- জগতের ক্ষুদ্রতর অংশ মাত্র, তাই এখানে মানুষের রণহুংকার নাই, দ্বেষ নাই, ষড়যন্ত্র নাই, সংঘাত নাই। কেবল এক চলমান জীবন- তাও আবার প্রকৃতির অলঙ্ঘনীয় নিয়মের অধীন। প্রকৃতির ভয়াল রূপ, একই সাথে স্থান এবং কালের নির্দয় সীমানার ভেতর মানুষের অসহায়ত্বকে তিনি জীবনের অনিবার্য পরিনতি হিসেবে দেখেন, একই সাথে এর সুঠাম ও দৃঢ় প্রাচীরের ফাঁকফোকড় গলে তিনি বেরিয়ে যান সূক্ষ্ম এবং রহস্যময় এক পরাবাস্তব জগতে, যেখানে তিনি নিজেকে আশ্রয়- প্রশয় দেন, যেখানে তিনি নিঃসঙ্গ, এক ও অনন্য। হতাশা এবং অক্ষমতার ভেতর থেকেও ব্যক্তিগত সত্তার ইতিবাচক চিন্তাকে তিনি সচেতনভাবে প্রাধান্য দিয়েছেন কবিতায়। আর তা করতে গিয়ে কবিতার বিভিন্ন প্রথা থেকে বিচ্ছিন্ন, একা ও সঙ্গীহীন হয়েছেন। গূঢ় চেতনা সম্পন্ন সৃষ্টি শৈলীসহ তাঁর যাত্রা অজ্ঞাত, রহস্যময়, জটিল এবং বিমূর্ত। আর এসব কারনে তাঁর শব্দচয়ন তীক্ষ্ণ, তীব্র। যা ভিন্নমাত্রা ও অর্থ বহন করে। তাঁর কবিতার প্রতিটি শব্দ আলাদা আলাদা অর্থ বহন করে আবার একত্রিত হয়ে একটা পংক্তি তৈরি করে এবং সমষ্টিগত অর্থ প্রকাশ করে। কাঠ থেকে তৈরি একটি কাঠের পুতুলের জড় জীবন চক্রের ভেতর তিনি নিজের এবং মানুষের জীবন যাপনের সম্পর্ক পেয়ে যান। উভয়ের সৃষ্টি ও ধ্বংস একই বৃত্তে- একে অন্যের প্রতিরূপ মাত্র। সময়ের কাছে সমর্পিত এবং অনিবার্য ক্ষয় ও ধ্বংসই তাদের মুক্তি ও সম্ভাবনা। নিজের সত্তা দ্বারা পরিচালিত এই বোধের প্রকাশ এবং বিকাশ ঘটান তার কবিতায়। তিনি একেবারেই নিভৃতচারী এক মানুষ। প্রচার এবং প্রসারের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকেন নিজের মতো। কারন জীবন তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে প্রতিভাত হয়নি, শুধু তা চলমান সময় আর স্থানের বিভ্রম মাত্র। "