আগুন পাখির রহস্য" বইয়ের কাহিনী_সংক্ষেপ: রোজকের মত কাকাবাবু তার সকল প্রাতঃকালীন কাজ সেরে সবে রেডিও নিয়ে বসেছে খবর শুনতে। ঠিক ওই সময় রঘু এসে কাঁচুমাচু করতে করতে জানায় সেই ভদ্রলোক দুইজন আবার এসেছে। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে, যারা গতকালও এসেছিল। কাকাবাবুর সাফ কথা আমি ওসব ঝক্কিঝামেলায় যেতে পারবো না। তুমি সন্তুকে ডেকে দাও, যা বলার ও-ই বুঝিয়ে বলবে। কাকাবাবু ভ্রু কুঁচকে চিন্তা করতে লাগলেন, এখন প্রায় নিত্যদিনই নানা লোক এসে হাজির হয়। কারো গয়না চুরি গেছে তো কারো বাড়িতে ভূতের উপদ্রব, কারো বাড়িতে খুন হয়েছে সেইসব সমস্যার সমাধান কাকাবাবুকেই করে দিতে হবে! এইসব প্রস্তাব শুনেলেই কাকাবাবু রেগেই আগুন হোন! আরে কাকাবাবু খুঁড়ো মানুষ এত ঝক্কিঝামেলা করার ক্ষমতা কি তার রয়েছে নাকি? আর সে কি পুলিশ? নাকি ভূতের ওঝা যে ভূত তাড়াবে, খুনী খুঁজে বের করবে। কিন্তু না! কে শোনে কার কথা! তারপরও লোকের ঝুলোঝুলি লেগেই আছে। নাহ আর সহ্য হয় না। নিচের লোক গুলো চলে গেলে সন্তু আর জোজো উপরে আসে। কাকাবাবু দুজনকে দুটো চকলেট বের করে দিতে দিতে বলেন, চল সন্তু তোর পড়ার চাপ না থাকলে কোচবিহার থেকে ঘুরে আসি। বনবাজিতপুর গ্রামের মানুষ নাকি রহস্যময় বিমান দেখে ভয়ে পড়িমরি করে ঘর বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে। চল গিয়ে দেখা যাক ব্যাপারখানা কি! পরদিন দুইজন কোচবিহারের উদ্দেশ্যে বিমানে চড়ে বসে। কিন্তু কাকাবাবুর সাথে কোথায় যাওয়া এক জ্বালা। ঘরে বাইরে সব জায়গাতেই ওর পরিচিত মানুষের অভাব নেই যেনো। বিমানের পাইলট ককপিট ছেড়ে সোজা কাকাবাবুর পায়ের কাছে এসে হাজির। প্রণাম করে উঠতেই দেখা গেল অরিন্দমকে। বিমান থেকে নেমে অরিন্দম যখন কাবাবুর জন্য গাড়ি খোঁজ করছে তখন পুলিশের বড়বাবু অনির্বাণ এসে হাজির। অনির্বাণের কল্যাণেই ওরা সার্কিট হাউজে জায়গা পেয়ে গেল, সাথে ঘোরার জন্য অনির্বাণের জিপগাড়িটাও। পরদিন অবশেষে সন্তু আর কাকাবাবুকে নিয়ে অনির্বাণ বনজিতপুর গ্রামে হাজির হয়। কাকাবাবু জানায় তারা এই গ্রামেই থাকতে চায় কয়দিন। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করে দিয়ে অনির্বাণ কোচবিহার চলে যায়। রাতেবেলায় ঘটে আসল ঘটনা! কাকাবাবু আর সন্তু নদীর পারে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় দেখা পায় সেই আগুন পাখির। যা এক দীর্ঘ নীলাভা আলোকরশ্মি কে অনুসরণ করে তার আশেপাশে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। তারপর হঠাৎ উধাও হয়ে যায়! অন্যদিকে গ্রামে তিন তিনটা খুন হয় দিন কয়েকের মধ্যে। আসল ব্যাপার টা কি? গ্রামে এসে জানা যায় টোবি দত্ত নামের এক লোক অনেক টাকা নিয়ে এসে এইখানে বিলাশ বাড়ি করেছে। তার বাড়ির আশেপাশে কাউকে সে যেতে দেয়না। গ্রামের কারো সাথে সে মিশেও না। আর রাতের বেলায় তার বাড়ির ছাদ থেকেই বের হয় ঐ নীলাভ আলো। আর ঐ নীল আলোকে অনুসরণ করেই আসে এক বিশালাকার অদ্ভুতদর্শন যান। যাকে গ্রামের লোকজন আগুন পাখি নাম দিয়েছেন। আগুন ছাড়ানো পাখির সাথে ঐ খুনের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি? নাকি সবই পুলিশকে বোকা বানানোর ধান্ধা? আর এই টোবি দত্তটাই বা কে? হঠাৎ কোথায় থেকে উড়ে এসে জুরে বসল? সন্তু আর কাকাবাবু কি পারবে এই রহস্যভেদ করতে? নাকি নিজেরাও জড়িয়ে পড়বে কোনো বিপদে? জানতে পড়ে নিন "আগুন পাখি রহস্য " বইটি।
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।