"দশটি কিশোর উপন্যাস" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: বড়দের গল্প লেখায় যিনি প্রতিষ্ঠিত, তিনি ছােটদের কাহিনী রচনায় সিদ্ধহস্ত হবেন এমন কোনও কথা নেই। ছােটদের গল্প ছােটদের ভাষায় বলতে পারা, ছােটদের চোখ দিয়ে দেখতে পারা বেশ দুরূহ। খুব সােজা নয় মােটেই। কিন্তু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বড়দের মতাে ছােটদের লেখাতেও এক সার্থক স্রষ্টা। কিশাের পাঠকদের জন্য এযাবৎ তিনি যা লিখেছেন তা এক আশ্চর্য কল্পনার জগৎ, যেখানে অনায়াসে ডানা মেলতে পারে তারা। অলীক ও অবাস্তব বিষয়কে বর্জন করে লেখক সেই জগতে চিত্রায়িত করেছেন কোনও রােমাঞ্চকর অভিযান, দেশপ্রেম, ভূগােল ও ইতিহাসের অবিকৃত রূপ, নির্মল রসিকতা, মানুষের প্রতি মমত্ব, সাহসিকতা ইত্যাদি বিষয়। মুক্তোর মতাে স্বচ্ছ সংলাপে এবং শিশিরবিন্দুর মতাে নির্ভার গদ্যে লেখা সেই সব । কাহিনী কিশাের-মনে মূল্যবােধ তৈরি করে। একই সঙ্গে তাদেরকে সময় ও সমাজ সম্পর্কে সচেতন করে তােলে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কিশােরকাহিনীগুলি শুধু গল্প নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। এই সংকলনে আছে এমনই দশটি কাহিনী: সত্যি রাজপুত্র, হলদে বাড়ির রহস্য, দিনে ডাকাতি, ডুংগা, জঙ্গলের মধ্যে গম্বুজ, আঁধার রাতের অতিথি, আকাশ দস্যু, কালাে পর্দার ওদিকে, উদাসী রাজকুমার এবং অন্ধকারের বন্ধু।
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।