"মিশর রহস্য" বইয়ের ভিতর থেকে নেওয়া কিছু লেখা: কাকাবাবু একটা পিরামিডে অভিযানে যাবেন তাই তার গাইড উট আর অন্যান্য জিনিস লাগবে। ডাগো আবদুল্লা কাকাবাবুর পুরনো পরিচিত গাইড। কাকাবাবু হানির লোককে দিয়ে সন্তুর কাছে চিঠি লিখে পাঠিয়েছে যেন আগামী কাল সকালে সন্তু একটা উট ভাড়া করে মেমফিসের পিরামিডের কাছে চলে আসে। এদিকে বিমান আর রিনি সেই সময় হোটেলে ছিল, তারাও সন্তুর সাথে যাওয়ার জেদ ধরল এডভেঞ্চারের লোভে। পরদিন সকালে সন্তু, বিমান আর রিনি উটের পিঠে চেপে পিরামিডের দিকে চলল। ওরা যখন নিদিষ্ট যায়গায় পৌঁছল তখন ডাগো একটা জীপ নিয়ে সন্তুকে নিতে এলো, ঠিকে সেই সময়ই মামুনের কয়েকজন লোক আরেকটা জীপে করে এসে রাইফেল বাগিয়ে ধরে সন্তুকে নিয়ে চলে গেলো। তারা যাওয়ার আগে ডাগোকে একটা চিঠি দিয়ে গেলো। ডাগো চিঠি নিয়ে কাকাবাবুর কাছে এসে সমস্তটা খুলে বলল। চিঠিতে লেখা ছিল কাকাবাবুকে ছেড়ে দিতে হবে যাতে তিনি মামুনকে মুফতির উইল বুঝিয়ে দিতে পারে। হানি সব শুনে খুব রেগে গেলো তখনই মামুনকে আক্রমণ করার জন্য রওনা হতে চাইলো, কিন্তু কাকাবাবু তাকে ক্ষান্ত করলেন। কাকাবাবু তাকে বুঝলেন মুফতির উইলে আসলে কোন সম্পদ নাই, তাই কাকাবাবু বুদ্ধি দিলেন মামুনকে চিঠি লিখতে। চিঠিতে লেখা হল যদি উইল অনুযায়ী কোন সম্পদ পাওয়া যায় তবে তার অর্ধেক মামুনকে দেয়া হবে। এই চিঠি পেয়ে মামুন সন্তুকে ছেড়ে দিলো। তাপর কাকাবাবুরা সবাই মুফতির নির্দেশিত পিরামিডের দিকে রওনা হল।
"মিশর রহস্য" লেখার ভিতরের কিছু শিক্ষনীয় পয়েন্ট: * কিছু একটা শিখতে শিখতে মাঝ পথে ছেড়ে দেয়া মোটেই ঠিক নয়। * কাছে দাড়িয়ে থাকলেও সব সময় সব কিছু বুঝা যায় না। * দুর্দান্ত প্রকৃতির মানুষকে খুব সহজেই বাগে আনা যায়। যাদের বাইরে থেকে নরম সরম মনে হয় তাদেরই ভেতরটা বুঝা মুশকিল। * পৃথিবীতে অবাক হবার মত ঘটনার প্রচুর ঘটে। * বিপদ দেখলে একেবারে ঘাবড়ে গেলে চলে না।
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।