সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে ফিরে এলো আবার কাকাবাবু ও সন্তু। ২য় গল্পে এবার কাকাবাবু আর সন্তু চলে এসেছে আন্দামান দ্বীপে। সন্তুর পরীক্ষা শেষ এখন সে ক্লাস নাইন এ উঠবে। স্বভাবতই অবসর সময় গুলো সে কাকাবাবুর সাথে ঘুরে কাটায়, এবার প্রথমত কাকাবাবু তাকে কোথায় নিয়ে যাবেন সেটা বলেন নি, শুধু জানতে চেয়েছেন সে প্লেনে না জাহাজে চড়বে। বেড়াবার জন্য পাসপোর্ট করতে গিয়ে অদ্ভুত ঘটনা ঘটে হঠাৎ করে এক সাহেব তাঁর গায়ে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে ট্যাক্সিতে উঠে যায়, সেই সময় এক টোকাই তাঁর পড়ে যাওয়া পাসপোর্ট নিয়ে পালাতে গেলে কাকাবাবু তাকে আটকায়। সন্তু বুঝতে পারে না টোকাই পাসপোর্ট দিয়ে কি করবে। কয়েকদিন পরই সে বিষয়টা ধরতে পারে। আন্দামানের সরকারি বাবু দাসগুপ্ত কাকাবাবুদের রিসিভ করেন। সেখানেই গিয়ে কাকাবাবু তাদের বলেন কেন তিনি সেখানে গিয়েছেন। পুরো বিষয়টা শুনে সন্তু খুব অবাক হয়। আন্দামান মূলত জেলখানা হিসেবে পরিচিত, এখন অবশ্য এখানে বেশকিছু জনবসতি গড়ে উঠেছে। এখানে ২০০ ও বেশি দ্বীপ আছে কিছু দ্বীপ মানুষ ও যথারীতি সরকারি পুলিশে ভরা, আর কিছু দ্বীপে জারোয়ারা থাকে। তাঁরা সভ্য জগতের মানুষকে দেখতে পারে না, কিন্তু ইতিহাস বলে প্রায় প্রতি কিছু বছর পর পর ই এখানে বিদেশি কিছু বিজ্ঞানী আসে কিন্তু পরে আর তাদের খোঁজ পাওয়া যায় না। কেন এই বিজ্ঞানীরা এখানে এসে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়? সেই রহস্য উদ্ঘাটন কীভাবে করেছিলো কাকাবাবু ও সন্তু জানতে পড়তে হবে এই বই। বেশ রোমাঞ্চকর, কাকাবাবু সিরিজের বইগুলোর সবচেয়ে বড় ঝামেলা বইগুলো পড়লেই আপনার ইতিহাসের প্রতি তীব্র টান অনুভব করবেন, ফলে বই পড়া শেষ করে আপনাকে আবার গুগল করে দেখতে হবে সেই ইতিহাস।
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।