গ্রন্থটি মূলত একটি সংকলিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ। বর্তমান বিশ^ এবং এই ধরিত্রী প্রকৃতি-পরিবেশের কারণে নানাভাবে বিপর্যস্ত ও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনরোধ ও বিশে^র এই প্রকৃতি-পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য জাতিসংঘসহ নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছে; এরপরও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না, বরং ধরিত্রী আরও ক্রুদ্ধ প্রতিমূর্তি ধারণ করছে প্রতিমুহূর্তে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় সৌরমণ্ডলের বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ, চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র প্রভৃতির মধ্যেও চলছে দুর্বার সাংঘর্ষিক প্রতিযোগিতা। এখনও এসকল সম্পর্কে অনেক রহস্য রয়ে গেছে না জানার মধ্যে। সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ তর্ক-বিতর্কও চলছে। জাতিসংঘসহ বিশ^ পরিবেশবাদীদের মধ্যেও নানা তর্র্ক-বিতর্কের ঝড় ওঠছে। মহাকারুণিক ভগবান বুদ্ধ রাজকুমার সিদ্ধার্থ অবস্থায় এবং বুদ্ধত্ব লাভের পর এই প্রকৃতিকে আলিঙ্গন করেছিলেন নানাভাবে। তাই বুদ্ধ জীবনে এবং বৌদ্ধ ধর্ম-দর্শন ও শিক্ষায় পরিবেশ প্রকৃতিকে রক্ষা ও ভালোবাসার কথা ত্রিপিটকে স্থান পেয়েছে। ত্রিপিটকের অন্যান্য গ্রন্থে প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণের নানা উপদেশ প্রদান করা হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ছ’শত বছর আগে তিনিই প্রথম বলেছিলেন- ‘উদ্ভিদের প্রাণ আছে’। বর্তমানে বিশ^ মানবতার চরম বিপর্যয় যেখানে বিপন্ন পৃথিবী, বিপন্ন মানবতা। প্রতিনিয়ত চলছে যুদ্ধ-বিগ্রহ, বিপন্ন মানবতার ধ্বংসলীলা। মানুষের সীমাহীন লোভ-লালসা এবং নীতি-বিরুদ্ধ আচরণও প্রকৃতি-পরিবেশের ভারসাম্যের উপর প্রতিনিয়ত বিরূপ প্রভাব ফেলে যাচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের পথ কী এবং আমাদেরকে কিভাবে সচেতন করা যাবে- এ লক্ষ্যেই এবং মহৎ-উদ্দেশ্যেই এ গ্রন্থ সম্পাদনা ও সংকলনের প্রয়াস। এ গ্রন্থে পনেরোটি নিবন্ধ স্থান পেয়েছে, তন্মধ্যে বারোটি বৌদ্ধ ধর্মদর্শন সম্পর্কিত এবং তিনটি বৈশি^ক প্রকৃতি-পরিবেশ ও নান্দনিকতা নিয়ে; যেমন- সবুজে ঘেরা যত দেশ, বিশ^জুড়ে নান্দনিক শহর এবং হারানো শহর। গ্রন্থের প্রতিটি প্রবন্ধ গবেষণাধর্মী এবং তাদের মৌলিক চিন্তার ফসল বলা যায়। গ্রন্থটি সংকলিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ হলেও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখাগুলোর গুরুত্ব ও মূল্য অনেক বেশি। প্রবন্ধগুলোকে এমনভাবে নির্বাচন করা হয়েছে যেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং দেশ-বিদেশের সুধি পাঠক সমাজ উপকৃত হয়।