সৌন্দর্যের চাদরের নীচে আড়াল হয়ে আছে নিঃস্ব একদল ভাগ্যহত মানুষের জীবন- চা শিল্প সংশ্লিষ্ট কর্মজীবনের ৩৩ বৎসরের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে চা বাগানের লুকিয়ে থাকা বাস্তবতাকে পাঠকের সামনে তুলে আনায় সচেষ্ট হয়েছেন লেখক। তিনি সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন চা বাগানের সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের বাহ্যিক এক স্কুল জীবন, যা প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে মনে হয় নীল আকাশের নীচে সবুজ অরণ্যের ভেতর এক আনন্দময় জগৎ। বরং তিনি প্রবেশ করেছেন তাদের অন্তর্নিহিত যন্ত্রণা, তাদের সংস্কার-কুসংস্কার, ধর্ম, দর্শন এবং উপাখ্যানের ভেতর। প্রতিনিয়ত সময়ের মাঝে তাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে টিকে থাকার শক্তি, সংগ্রাম ও বিকাশ লেখককে আকৃষ্ট করেছে। ব্যবস্থাপকদের অসহায়ত্ব ও নিঃসঙ্গ জীবন তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। একই সাথে তিনি তুলে এনেছেন বৃহত্তর সিলেটের চা বাগানগুলোর আসে-পাশে বাস করা মণিপুরী এবং খাসিয়াদের জীবন এবং তাদের সমাজের অন্তর্নিহিত চেতনা। ইতিহাসের ক্রম বিবর্তন ও ক্রমবিকাশের ভেতর তিনি বারবার উপলব্ধি করেছেন মানুষের অসহায়ত্ব- তাকে অতিক্রম করার বিপুল চেষ্টা, সংগ্রাম ও সম্ভাবনা। গল্পের নির্মাণ কৌশলে তিনি প্রচলিত ধারাকে সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন এবং নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও নির্মাণ পদ্ধতি দ্বারা তা সৃজন করেছেন।