“কথোপকথন-৪" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ নন্দিনী শুভঙ্করের সম্পর্কে সবই নিঃশেষ করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল কথােপকথন / ৩-এ। এমনকি চিঠির টুকরাে-টাকরাও থলি ঝেড়ে উপুড়। ৮৯-তে বাংলাদেশে । ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কক্স বাজারে, যেখানে যাই তরুণ-তরুণীদের উম্মাদ দাবী, চাই কথােপকথন / ৪ । বুঝিয়ে বলি, অসম্ভব। বিয়ের পরই নন্দিনী চলে গেছে স্বামীর সঙ্গে য়ুরােপে। এদের মাঝখানে এখন দেশ-দেশান্তরের লম্বা দেয়াল। এসব শুনেও এদের সহজ উত্তর, আপনি লিখলেই কাছাকাছি এসে যাবে ওরা। আপনিই যে শুভঙ্কর, সে কি আর জানি না আমরা ? কিছুতেই বােঝাতে পারি না যে আমি শুধু ওদের ভালােবাসাবাসির গােপন স্বাক্ষী । ফিরে এসেছি কলকাতায়। কিছুদিন পরেই উড়ে যেতে যেতে পাখির ঝকের একজন কানে কানে জানিয়ে গেল, ফিরে এসেছে নন্দিনী । শােনা মাত্রই রক্তে লাফিয়ে ওঠে কৌতুহল । সাত বছর পরে য়ুরােপ-ফের্তা নন্দিনী নিশ্চয়ই নেই আর আগের মত । প্রেমিকা হয়ে গেছে গৃহিণী । তার কণ্ঠস্বরে এখন আর আগের মত বেজে ওঠার কথা নয় কামনাবাসনার করুণ কল্লোল। তাহলে কেমন হতে পারে ওদের কথােপকথন? গােপনে কান পাতি, আর অবাক হয়ে যাই । হুবহু আগের মতই রয়ে গেছে দুজন। একজন মেঘ হয়ে গলে। আরেকজন শ্রাবণে ভাসে ।
জন্ম ফেব্রুয়ারি ২, ১৯৩১ - মার্চ ১৯, ১৯৯৭পূর্ণেন্দু পত্রী নামে সর্বাধিক পরিচিত; ছদ্মনাম সমুদ্রগুপ্ত) একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, সাহিত্য গবেষক, কলকাতা গবেষক, চিত্র-পরিচালক ও প্রচ্ছদশিল্পী। পূর্ণেন্দু পত্রীর জন্ম বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার নাকোলে। পিতা পুলিনবিহারী পত্রী, মা নির্মলা দেবী। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পারিবারিক কলহের কারণে পৈত্রিক ভিটে ছেড়ে চলে আসেন কলকাতায়। ১৯৪৯ সালে ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে ভর্তি হন বাণিজ্যিক শিল্পকলা বা কমর্শিয়াল আর্টের ছাত্র হিসেবে। যদিও নানা কারণে এই পাঠক্রম শেষ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। ছেলেবেলায় বাগনানের বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেতা অমল গাঙ্গুলির সংস্পর্শে এসে কমিউনিস্ট পার্টির নানান সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কলকাতায় অভিভাবক কাকা নিকুঞ্জবিহারী পত্রীর চলচ্চিত্র পত্রিকা 'চিত্রিতা' ও সাহিত্যপত্র দীপালি-তে তাঁর আঁকা ও লেখার সূচনা হয়। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হয়ে পড়লে রাজনীতি ও সাহিত্যচর্চা উভয়েই একসঙ্গে চালাতে থাকেন। মৃত্যুর পূর্বে ১৯৯৬ সালে তার প্রথম খণ্ড বঙ্কিম যুগ প্রকাশিত হয়। শিশুসাহিত্যেও তিনি ছিলেন এক জনপ্রিয় লেখক। ছোটোদের জন্য লিখেছেন আলটুং ফালটুং, ম্যাকের বাবা খ্যাঁক, ইল্লীবিল্লী, দুষ্টুর রামায়ণ, জুনিয়র ব্যোমকেশ, জাম্বো দি জিনিয়াস, প্রভৃতি হাসির বই। আমার ছেলেবেলা নামে তাঁর একটি স্মৃতিকথাও রয়েছে। সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে বিদ্যাসাগর পুরস্কারে ভূষিত করেন। ১৯৬৫ সালে প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্প অবলম্বনে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র স্বপ্ন নিয়ে মুক্তি পায়। এর পর রবীন্দ্রনাথের কাহিনি অবলম্বনে স্ত্রীর পত্র ও মালঞ্চ সহ পাঁচটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন তিনি। এছাড়াও নির্মাণ করেন সাতটি তথ্যচিত্র। স্ত্রীর পত্র চলচ্চিত্রটির জন্য তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চিত্রনির্মাতা ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে সমরেশ বসুর কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত তাঁর ছেঁড়া তমসুক চলচ্চিত্রটিও একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছিল।