জীবন দর্পণের বৃহৎ অংশই হলো সমাজের দর্পণ। অর্থাৎ ব্যক্তিসমষ্টিতে সমাজের উৎপত্তি। আত্মস্মৃতি কিংবা আত্মজৈবনিক গ্রন্থে ব্যক্তির সমকালীন সমাজের অবস্থা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সমকালীন সমাজের বিভিন্ন মানদণ্ডের প্রতিফলন ঘটে। তাই লেখক মাহমুদ রেজা চৌধুরী নিজেই বলেছেন, ‘আত্মস্মৃতি লেখা খুব সহজ কাজ নয়।’ এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে তিনি এ গ্রন্থে বিশ শতকের শুরু থেকে একুশ শতকের বিশের দশক পর্যন্ত সমাজচিত্র অঙ্কন করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। হোক তা স্বদেশের কিংবা অন্য কোনো দেশের। আবার তিনি সেসব কিছু অত্যন্ত সাদামাটা ভাষায় উপস্থাপনও করেছেন। এ গ্রন্থের উপজীব্য বিষয় হলো, পারিবারিক শৃঙ্খলা, ব্যক্তিগত আদর্শবাদিতার সুফল-কুফল, রূঢ় বাস্তবতায় জগৎ-জীবনের নৈতিক অবস্থান, বিভিন্ন সমাজের স্তরবিন্যাসের আখ্যান, পরিমিত হাস্যরসপূর্ণ জীবনচিত্র অঙ্কন ও আড্ডা দেওয়ার সুফল এবং জীবন মাত্রেই ট্রাজেডির মুখোমুখি হওয়া ইত্যাদি। এক কথায় বলা যায়, এ গ্রন্থটি সমাজজ্ঞিানের একটি আকর গ্রন্থ। স্বদেশ ও প্রবাসজীবনে একজন ব্যক্তি বিভিন্ন বয়সে সমাজকে কীভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে তারই নিখুঁত চিত্র অঙ্কন করেছেন লেখক এই আত্মজৈবনিক গ্রন্থে। রাজহাঁস যেভাবে দুধ ও জলের মিশ্রণ থেকে জল ফেলে দুধটুকু গ্রহণ করে, ঠিক তেমনিভাবে লেখক সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে একজন ব্যক্তির যাপন-প্রেক্ষাপট এবং জীবনদর্শনকে ছেঁকে তুলে এনেছেন। তাছাড়া এটা বলা অত্যুক্তি হবে না, এই গ্রন্থ আত্মজীবনীর চেয়েও বেশিকিছু ধারণ করে আছে। কারণ বইটিতে পাওয়া যাবে কিছু অজানা ঐতিহাসিক সত্য, যেগুলো অনুসন্ধিৎসু গবেষক ও পাঠকের রসাস্বাদনে সহায়ক হবে।
জনন্ম ১৯৫৭ সালে বরিশালে। মা আক্তারী বেগম ও বাবা হোসেন রেজা চৌধুরী এর একমাত্র পুত্র সন্তান মাহমুদ রেজা চৌধুরী ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ছাত্র রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ না করলেও তিনি সমাজ ও রাজনীতি বিষয়েই প্রধানত লেখেন। ১৯৮৬ সাল থেকে শুরু করে প্রায় দু'যুগেরও বেশী সময় ধরে রাজনীতি বিশ্লেষক, দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জনাব চৌধুরী দেশে-বিদেশের সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুপরিচিত পত্র-পত্রিকায় লিখে আসছেন। তার লেখার প্রেক্ষাপট আমাদের ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধ, রাজনৈতিক সচেতনতা, সমাজতাত্বিক দৃষ্টিকোণের উপস্থাপন এবং বিশ্লেষণ। লেখকের কাথায় লেখালেখি হচ্ছে "নিজের প্রতি তার সামাজিক দায়িত্ববোধ চর্চার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা"। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালিন তিনি ডাক্স বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় এস. এম হলের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং শ্রেষ্ঠ বক্তার সম্মানও অর্জন করেন। এক সময়ে জাতীয় বেতারের সংবাদ পাঠক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় খ্যাতি অর্জনকারী জনাব চৌধুরী ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে "মুক্ত ফোরাম" নামে একটি সামাজিক থিংক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ভয়েস অব আমেরিকার একজন অনিয়মিত কন্ট্রিবিউটর। পেশাগত জীবনে তিনি সুদীর্ঘকাল আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক শিপিং কর্পোরেশনে সেলস্ মার্কেটিং এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।