আলহামদুলিল্লাহ। ছোটদের জন্য বই করার চাপ যেমন ছিল, ইচ্ছেও ছিল খুব। আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে আরেকটি শিশুতোষ বই রচনা সম্পন্ন করলাম। আাল্লাহর দরবারে অনেক অনেক শুকরিয়া। আর রাসূল (সা)-এর প্রতি দুরুদ বারেবার।
আমাদের সন্তানেরা হল আমানাত। এই সন্তানদের দেখভাল করার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের ওপর প্রদান করেছেন। মূলত, নেয়ামত হিসেবে সন্তান দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অনেক কঠিন দায়িত্ব অর্পন করেছেন। আর সেই কারণেই, আমরা কীভাবে বাচ্চাদের প্রতিপালন করছি কিংবা কীভাবে এই জিম্মাদারি ও আমানতদারীতা রক্ষা করছি- তা নিয়ে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।
আমরা জানি, বাচ্চারা ভীষণভাবে তাদের পিতা-মাতার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। তাই সন্তানদের আচরণ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও কার্যক্রমের বিষয়ে পিতামাতাকেও জবাবদিহি করতে হবে। বাচ্চারা তাদের পিতামাতার জন্য সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বার্তা নিয়ে আসে। যদি কোনো পিতা-মাতার সুখী হওয়ার মত সব ধরনের দুনিয়াবি সম্পদ বিশেষ করে টাকা পয়সা, সম্ভ্রান্ত ক্যারিয়ার এবং অঢেল ধনসম্পদ থাকে; তারপরও এইসব জাগতিক বিষয়াবলি তাকে সুখী করতে পারবে না যদি তার সন্তান বিপথগামী হয়ে যায়।
আমাদের বাচ্চারা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড়ো বিনিয়োগ। দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক পিতা-মাতাই বৈষয়িক নানা কাজে অনেকটা সময়, শক্তি-সামর্থ্য এবং টাকা পয়সা ব্যয় করেন অথচ তাদের সন্তানদের ব্যাপারে তারা ততটা যত্নবান থাকেন না। এই কথাটি সবসময় মনে রাখতে হবে যে, আমাদের সন্তানরাই আগামী দিনের পরিনত নাগরিক। তাই তাদের সাথে যে সময়টি আমরা পার করব তাকে অপচয় হিসেবে দেখা উচিত নয়। বরং এই সময়টিই হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম বিনিয়োগ।
যদি মুসলিমেরা তাদের বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানোকে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করতো কিংবা বাচ্চাদের ব্যবহার, আচার আচরণকে সুন্দর করার জন্য এবং তাদেরকে ইসলামের সম্বন্ধে সঠিক ধারণা দেওয়ার জন্য যদি প্রয়োজনীয় সময় ব্যায় করতো; অথবা যদি পিতামাতারা এই বাচ্চাদের অন্তরে ইসলামের সৌন্দর্যকে সঠিকভাবে প্রবেশ করিয়ে দিতে পারতো তাহলে আল্লাহর রহমতে আমরা একটি শক্তিশালী মুসলিম সম্প্রদায় পেতাম এবং জাতি হিসেবে মুসলমানদের অবস্থানও আরো অনেক বেশি উন্নত হতো।
শিশুদের ইসলামী শিক্ষা তথা নববী শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো পরিবার। কারণ, পরিবারই শিশুর মানসিক ও বৈষয়িক বিকাশের সর্বপ্রথম আশ্রয়স্থল। একটি শিশু তার যেকোনোও ধরনের প্রয়োজন পূরণে অক্ষম অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। পরিবার তখন এগিয়ে আসে এবং সকল প্রকার প্রয়োজন পূরণে সহায়তা ও ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তাকে সুন্দরভাবে লালন-পালন করে থাকে। পৃথিবীতে খলিফা হিসেবে রবের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ ও ইসলামকে সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব পালনে সন্তানকে যোগ্য করে তুলতে পারে পরিবার। ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমরা রাসূল (সা)-কে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা নিজেদের রক্ষা করব। কিন্তু আমাদের পরিবারকে কীভাবে রক্ষা করব? রাসূল (সা) উত্তরে বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের যে আদেশ দিয়েছেন, তাদেরও তোমরা সেই একই আদেশ দাও। আল্লাহ তাআলা যা থেকে নিষেধ করেছেন, তাদেরও তা থেকে নিষেধ করো। (তাফসিরে কুরতুবি : ১৭১/১৮)
আমি এর আগেও একাধিক শিশুতোষ বই লিখেছি। তবে, এই বইটির একটু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য আছে। আমি লক্ষ্য করেছি, অনেক সময় শিশুদের বই জানলেই আগ্রহী অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের জন্য বইটি কিনেন। এরপর বাসায় বাচ্চাদের হাতে বইটি তুলে দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করেন। সন্তানেরা বইটি পড়লো কিনা- তা যেমন খোঁজ নেন না, আবার একইসঙ্গে বাচ্চাদের বই মনে করে নিজেরা কখনো বইয়ের পাতা উল্টানোর তাগিদ অনুভব করেন না। কিন্তু এই বইটি আমি কেবল শিশুদের জন্য লিখিনি। এতে অনেক বার্তা আছে যা পিতামাতাকেও জানতে হবে। শিশুতোষ বইতে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা থাকে, পরামর্শ থাকে। কিন্তু তারা নিজেরাই এগুলো মানতে বা শিখতে পারবে না। ততটা সক্ষমতা তাদের নেই।
ধরুন, আপনি শিশুদেরকে তাদের উপযোগী দুআ শেখার কথা বললেন, একাধিক সূরা মুখস্থ করার কথা বললেন। বইতে শিশুরা এগুলো জানলো ঠিকই, কিন্তু বাবা-মা না শেখালে বা কিংবা পরিবার থেকে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না থাকলে সে নিজে কীভাবে শিখবে? এই বইতে নবীজি (সা)-এর সীরাতের আলোকে আমাদের সন্তানদের জন্য নানা ধরনের দিক নির্দেশনা রয়েছে। বইটি স্বার্থক হবে, যদি সন্তানদের পাশাপাশি পিতামাতাও এই বইটি পড়েন। আরো ভালো হবে, যদি বাবা-মা নিজেরাই বাচ্চাদের বইটি পড়ে শোনান। তাহলে তারা যেমন কিছু মেসেজ পাবেন আবার সন্তানকেও মূল প্রতিপাদ্য বিষয়টি বুঝিয়ে দিতে পারবেন।