রবিজীবনীর সপ্তম খন্ড প্রকাশিত হলো। 1912-1913-এ বিংশ শতাব্দীর ইংল্যান্ড ও আমেরিকা ভ্রমণ, সেখানকার কিছু প্রগতিশীল চিন্তাবিদ ও কবির সঙ্গে পরিচয়ের ফলে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা জগতে আলোড়ন জেগেছে, দেশে ফিরে এসে বাংলা ও ভারতের স্থাবর সংকীর্ণ জীবনযাত্রার মধ্যে তার কোনো প্রতিফলন দেখেননি তিনি। শুরু হয়েছে সংঘাত - সেই সংঘাতের পরিচয় তার সাহিত্য রীতিতে ও সাহিত্যের বিষয়ে, ধর্ম সমাজ ও রাজনীতির ব্যাখ্যায় প্রতিফলিত। সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বীভৎসতাযর অজস্র দৃষ্টান্ত য়ুরোপীয় উপনিবেশগুলোতে দেখলেও, সেই সভ্যতার উজ্জ্বল দিক তাকে মুগ্ধ করে রেখেছিল, প্রাচ্যের বাণীকে নোবেল পুরস্কারের স্বীকৃতি দেওয়ার ঔদার্য য়ুরোপীয় সভ্যতার ঔজ্জ্বল্যেরই প্রকাশ তার মনে হয়েছে। কিন্তু প্রথম মহাযুদ্ধ বাধলে সেই সভ্যতাগর্বী য়ুরোপের যে ভয়ঙ্কর রূপ তার চোখে পড়েছে তাতে ওই সভ্যতার অন্তর্নিহিত কালিমাটিই বড় হয়ে উঠেছে তার কাছে। এর প্রতিকার তিনি ভেবেছেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিলনে, দুটি পৃথকধর্মী সভ্যতাকে একটি নীড়ে সমন্বিত করার উদ্দেশ্যে স্থাপন করেছেন বিশ্বভারতী। কিন্তু সেই আদর্শকে প্রচার ও রূপ দেবার মুহূর্তেই প্রত্যক্ষ করেছেন বিজয়গর্বে গরীয়ান ইংরেজের বর্বরতা জালিয়ানওয়ালা বাগের প্রান্তরে। ক্ষোভে দুঃখে বর্জন করেছেন ইংরাজ-রাজার দেওয়া ‘স্যার’ উপাধি। এই কাহিনীই বিবৃত হয়েছে বর্তমান খণ্ডে।
Proshantokumar Paul-এর জন্ম ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৫ (১৮ মে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ)। কলকাতায়। শৈশব কেটেছিল কৃষ্ণনগরে, প্রাথমিক পড়াশোনা এ. ভি. স্কুলে। কৈশোর ও যৌবন কলকাতারই স্কুলে-কলেজে। স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল থেকে স্কুল ফাইনাল পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখান থেকে ১৯৫৮ সালে বাংলায় অনার্স নিয়ে বি-এ পাশ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এম-এ পাশ করেছেন ১৯৬০ সালে। ১৯৬১ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনা শুরু করেন কলকাতার আনন্দমোহন কলেজে অধ্যাপনা করতে করতেই রবীন্দ্রজীবনের বিবর্তনের সঙ্গে মিলিয়ে ধারাবাহিকভাবে রবীন্দ্ররচনা পড়তে গিয়ে অনুভব করেন যে, রবীন্দ্রজীবনীর এক বিশাল অংশ তমসাবৃত অবস্থায় রয়েছে। উৎসাহী হয়ে শুরু করেন। গবেষণা, অবশ্য ডিগ্রি-প্রত্যাশার বাইরে দাঁড়িয়ে। ১৯৭২ থেকে সেই নবতর গবেষণার সূচনা। ১৯৮২-তে ‘রবিজীবনী’র প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। প্রকাশমাত্রই এ-গ্রন্থ সর্বস্তরে তোলে আলোড়ন। ১৯৮৪-তে বেরোয় দ্বিতীয় খণ্ড। একইভাবে সমাদৃত হয় এই নতুন খণ্ডও। ১৯৮৫ সালে ‘রবিজীবনী’র জন্য দুটি বিশিষ্ট পুরস্কার পান। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহদাস পুরস্কার ও সুরেশচন্দ্র-স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার। বিশ্বভারতীতে আনন্দবাজার পত্রিকা সংস্থা প্রবর্তিত অশোককুমার সরকার স্মৃতিবৃত্তির প্রথম প্রাপকরূপে ১৯৮৫ সাল থেকে তিন বৎসর শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রভবনে গবেষণা করে প্রশান্তকুমার ১৯৯৩-এর। শেষ থেকে সেখানকার অধ্যাপক পদে কাজ করেছেন। কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটুট তাঁকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধিতে সম্মানিত করেছেন। ২০০১-এ পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার রবিজীবনী সপ্তম খণ্ডের জন্য।