বলছি ৬৯ এর গণআন্দোলনের সময়ের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ তখন পাকিস্তানি শাসন শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সোচ্চার। মিটিং, মিছিল আর আন্দোলনে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সেই সময় পাকিস্তান সরকারের মদদ পুষ্ট ছাত্র সংগঠন এনএসএফ (ঘধঃরড়হধষ ঝঃঁফবহঃ'ং ঋবফবৎধঃরড়হ) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবর্ণনীয় জুলুম আর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক ছাত্রের নামেই জারি হয়েছে হুলিয়া। এই সমস্ত ছাত্ররা তাই পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে ঘরবাড়ি, বাবা-মা আর স্বজন পরিজন ছেড়ে একদম খালি হাতে পালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা থেকে। এদের কারো কারো কোন গন্তব্য ও জানা নেই। এরা শুধুই জানে ঢাকা থেকে তাঁদেরকে বেরিয়ে যেতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। অন্যথায় তাঁদেরকে গ্রেপ্তার হতে হবে পুলিশের হাতে।
আমি তখন স্কুলের ছাত্র। সম্ভবত সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। একদিন সন্ধ্যায় পড়ার ঘরে বসে আমরা ছোটোরা পড়াশোনা করছিলাম। এমন সময় আমার বাবা আনুমানিক ২৩/২৪ বছরের একজন যুবককে নিয়ে আমাদের পড়ার ঘরে ঢুকলেন। বাবা আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন আজ থেকে ইনি তোমাদের গৃহশিক্ষক। এখন থেকে উনি আমাদের এখানেই থাকবেন। কুশল বিনিময় ছাড়া সেদিন আর স্যারের সাথে আমাদের তেমন কোন আলাপ হয়নি। তিনি যথেষ্ট ক্লান্ত ছিলেন বলে বাবা সেদিন তাঁর সাথে কোন কথাবার্তা না বলতে আমাদেরকে নির্দেশ দেন যাতে করে তিনি বিশ্রাম নিতে পারেন।