নীল শাড়ী গল্পটি একটি অতি প্রাকৃতিক গল্প। যে গল্পে দেখা যায় বাবা মা হারা ছেলে আনিস। পড়াশুনা শেষ করে বারার পেশা শিক্ষকতা বেছে নেয়। শহরের কোন মর্ডান স্কুল বা কলেজে নয়। সুদূর নীলফামারী জেলার জলঢাকা থানার পাঠানপাড়া ইউনিয়নের হাইস্কুলে। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির প্রধান রায়হান সাহেবের মেয়ে সিমিনকে সে প্রাইভেট পড়ায়। আনিস মূলত অংকের শিক্ষক। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আনিস পাঠানপাড়া ইউনিয়ন তথা সমস্ত জলঢাকায় অংকের জাহাজ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। স্কুলে তার ছাত্ররা এবং পাঠানপাড়া ইউনিয়নের মানুষেরা আনিসকে অনেক পছন্দ করে। পছন্দ করে আনিসের ছাত্রী সিমিনও। সিমিন ভালোবাসে আনিসকে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে না তার প্রাইভেট টিচারকে। সিমিনের বাবা রায়হান সাহেব স্কুল কমিটির চেয়ারম্যান এবং বনিক সমিতির সভাপতি। সিমিননের বাবা রায়হান সাহেব সিমিনের বিয়ে ঠিক করে গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলে তানভীরের সাথে। বিয়ের খবরে সিমিন রাগান্বিত! সিমিনের ভালোবাসার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যায়। সিমিন-ই প্রকাশ করে। সিমিনিকে শুরু হয়ে সিমিনের পরিবারে দ্ব›দ্ব! গত বেশ কিছু দিন ধরে পাঠানপাড়া তথা সারাদেশে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। আনিসের ধারনা এবার দেশে বন্যা হবে। জলঢাকার উপর দিয়ে তিস্তা নদী বয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের বন্যার অবস্থা ভয়াবহ হবে। আনিস আগেভাগে অনেক কিছু বুঝতে পারে। আনিসের মৃত বাবা মাঝে মাঝেই কখনও একা কখনও বা আরো কয়েকজন নিয়ে তার সাথে দেখা করে স্বপ্নে! আনিসকে সে নানান পরামর্শ দেয়। কি করতে হবে কি করতে হবে না,তা বলে দেয়। আনিসের যে অনেক ক্ষমতা রয়েছে তা আনিসকে জানিয়ে দেয়। সিমিনের গোপন ভালোবাসার কিছুই জানে না আনিস। সিমিনকে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হবে, অংকের দুর্বলতা কাটিয়ে অংকে লেটার পেতে হবে, এইসব কথাই আনিস সিমিনকে বুঝাতে ব্যস্ত! গত কয়েক দিন থেকে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে! আনিসের বাসাটি একটি পরিত্যক্ত বাসা। বাসার পাশেই তিস্তা ক্যানেল। তিস্তা ক্যানেল ফুলেফেঁপে একাকার! যখন তখন ক্যানেলে দেয়া বাধ ভেঙ্গে ভাসিয়ে দিবে পুরো এলাকা! স্কুলের হেড মাস্টার আরিফ সাহেব মতলবি মানুষ! নিজের কুকর্মের বোঝা আনিসের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজে রক্ষা পেতে চায়! মিথ্যে মামলায় ফাসিয়ে আনিসকে গ্রেফতার করানো হয়! আনিসকে রক্ষায় বিশেষ ভুমিকা রাখে সিমিনের বড় ভাইয়ের ছয় বছরের মেয়ে মিতু এবং স্কুলের পিয়ন জয়নাল। মিতু এবং জয়নালেরও বিশেষ কিছু প্রাকৃতিক ক্ষমতা রয়েছে! পুরো পাঠানপাড়া ইউনিয়নের জনগণ আনিসের মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়! সিমিনের বড় ভাই শামীম এবং সিমিনের বাবা কোন ভাবেই সিমিনের ভালোবাসা মেনে নেয় না। তাদের পছন্দ করা ছেলে তানভীরের সাথেই বিয়ে দিবে তারা। সিমিন কোন ভাবেই বিয়েতে রাজি নয়। সিমিন তানভীরের সাথে খারাপ আচরণ করে! এতে ক্ষিপ্ত হয় তানভীর! তানভীর সিমিনকেই বিয়ে করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়! প্রকৃতি গত কয়েক দিন থেকে বিরুপ আচরণ করছে! ভয়াবহ বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যার শংকা দেখা দেয় জলঢাকা থানায়। একদিকে প্রকৃতির বৈরী আচরণ, অন্য দিকে আনিসের সাথে সিমিনের পরিবার এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং তার ছেলে তানভীরের ষড়যন্ত্র, আনিসের প্রতি সিমিনের ভয়াবহ রকমের ভালোবাসা! কি হবে আনিসের? কি হবে সিমিনের গোপন ভালোবাসার? ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল থেকে আনিস কি মুক্ত হতে পারবে? সিমিন কি তার ভালোবাসায় জয়ী হবে? বারবার স্বপ্নে এসে আনিসের বাবা আনিসকে নানান বিষয়ে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেয়। আনিসকে নাকি প্রকৃতি বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে? কি সেই বিশেষ ক্ষমতা? এমনই নানান প্রশ্ন এবং প্রশ্নের উত্তরের সমাধানের গল্প নিয়ে লেখা হয়েছে সময়ের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন কবীর হিমু'র ১১তম উপন্যাস...."নীল শাড়ী"