ফ্ল্যাপে লিখা কথা এই উপন্যাসের ঝড় কেবল মরুভূমির বিস্তৃত বৃত্তেই সীমাবদ্ধ নয়, ছড়িয়ে গেছে সজল বাংলাদেশেও। সংকট আর সমূহ সমস্যার এই ঝড় বয়ে চলেছে মনের গহন প্রদেশে, ঘরে ঘরে, পরিবারে পরিবারে ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে তছনছ হয়ে যাওয়া প্রকৃতির মতো এই ঝড়েও লন্ডভন্ড মনঃপ্রকৃতি, সর্বোপরি মনোভুবন।
উপন্যাসের মূল প্রবাহে আছে স্বদেশ রেখে যাওয়া স্বজনদের জন্য মরু-শ্রমিকের বুকের প্রান্তরে রোপিত মমতার মৌলিক টান; আছে তার সংগোপন হাহাকারও। আছে বুকের কন্দরে কন্দরে ভালোবাসার মশাল জ্বেলে অপেক্ষায় থাকা বিরহিণী এক কিশোরী বধূর তীব্র যাতনাময় উপলব্ধির উজ্জ্বল উদ্ভাস। আর এসব কিছুর সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে গ্রামীণ পরম প্রকৃতি। স্বামীর অনুপস্থিতিতে দেশে শ্বশুরবাড়িতে একা থাকা বউয়ের সঙ্গে শাশুড়ির দ্বন্দ্বের মনো-সামাজিক ব্যবচ্ছেদও প্রতিভাসিত ঠাস-বুনোট চরিত্র চিত্রণ আর কাহিনি-বিন্যাসের মধ্য দিয়ে। আছে অরক্ষিত নারীকে মখোশধারী পুরুষের লোভনীয় ফাঁদে জড়ানোর সমূল স্বরূপেরও সমাচার। প্রাসঙ্গিক চরিত্র ও ঘটনার মধ্য দিয়ে এই সঙ্গে উঠে এসেছে মরুর দেশের ধনাঢ্য পরিবারের আলো ঝলমল জীবনের অন্তরালে লুকোনো বিষাদ আর ধনদৌলতের মিথ্যে মরীচিকার চালচিত্র। এইসব নিষ্ঠুরতার পাশাপাশি মানবিকতারও প্রকাশ ঘটেছে উজ্জ্বলভাবে।
কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের জাদুকরী রচনাশৈলী আর সুচারু কাহিনি বিন্যাসের কল্যাণে মরুঝড় উপন্যাস হয়ে উঠেছে আমাদের নিগৃঢ় বাস্তবতার েএমন একটি নিরেট সাহিত্যিক উপাখ্যান, যার পাঠে আত্মমগ্ন না হয়ে পারা যায় না।
তিনি একদিকে কথাসাহিত্যিক, অন্যদিকে মনোশিক্ষাবিদ। ২০১৮ সালে কথাসাহিত্যে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। জাপানের ১২তম ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব সাইকিয়াট্রির ফেলোশিপ প্রোগ্রামে নির্বাচিত হন বিশ্বের প্রথম সেরা ফেলো। জন্ম ১৯৬০ সালের ২ জানুয়ারি সাগরকন্যা সন্দ্বীপে। এমবিবিএস করেছেন সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক ’শব্দঘর’র সম্পাদক এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএমএইচ)-এর একাডেমিক পরিচালক। ২০১২ সালে তাঁর মনস্তত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থ ‘মানব মনের উদ্বেগ ও বিষন্নতা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য করা হয়।