১৯৫৬ সালে যখন ভারতের চিত্রকলা’র প্রথম। সংস্করণ প্রকাশিত হয় তখন পর্যন্ত পার্সি ব্রাউন থেকে শুরু করে দেশী-বিদেশী কলা-ঐতিহাসিক বা -সমালােচকরা রাজনৈতিক ও সামাজিক বিবর্তনের সঙ্গে চিত্ররীতি ও দর্শনকে যুক্ত করে ভারতীয়। চিত্রকলার কোনও সামাজিক ইতিহাস লেখেননি। যা কিছু গবেষণা ও রচনা হয়েছে তা অধিকাংশই আঞ্চলিক বা বিশেষ যুগনির্ভর। সেদিক থেকে অশােক মিত্রের ‘ভারতের চিত্রকলা’ ভারতীয় ভাষায়। এ-দেশের শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাস রচনায় প্রথম প্রয়াস বলা যায়। প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্র থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ভারতের চিত্রকলার বিবর্তন ও সমৃদ্ধি দুটি খণ্ডে আলােচিত হয়েছে। প্রথম খণ্ড শেষ হয়েছে। আঠারাে শতকের প্রথমার্ধে। দ্বিতীয় খণ্ডের সময়সীমা খ্রীস্টীয় আঠারাে শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিশ শতকের নবম দশক। অনেক উৎকৃষ্ট ও প্রাচীন এবং আধুনিক ভারতীয় ছবি ভারতের বাইরে থাকায় ছাপা-ছবির অ্যালবামের উপরেই প্রথম সংস্করণে তাঁকে বেশি নির্ভর করতে হয়। ১৯৫৮ সালের পর থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ভারতবর্ষে ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বহু চিত্রশালা ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে ছবি দেখবার ফলে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আবেগ ও প্রত্যয় আসায় অশােক মিত্রের প্রথম প্রচেষ্টা ও আলােচনা এবার দ্বিগুণ বৃদ্ধি। পেয়েছে। সব থেকে সমৃদ্ধি পেয়েছে সাদা-কালাে ও বহুরঙে ছাপা চিত্রাবলী সম্ভার, যা এই ধরনের ইতিহাস রচনায় একটি নতুন ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছে। ভারতের চিত্রকলার বিবর্তনের ইতিহাস বিকৃত করতে গিয়ে লেখক শুধুমাত্র রজার ফ্রাইয়ের দৃষ্টিতে ভারতীয় চিত্রকলার মধ্যে বিশ্বপ্রকৃতির মূল সত্তার পরিশুদ্ধ রূপের প্রতি মুগ্ধতা কিংবা রেমব্রান্টের লেখায় ভারতীয় চিত্রকলার দুর্লভ মিতব্যয়িতার অকুণ্ঠিত স্তুতির কথাই বলেননি, সেই সঙ্গে দেখিয়েছেন। ভারতীয় শিল্পীর পক্ষেও পাশ্চাত্য চিত্রকলার বৈজ্ঞানিক মনােভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিকে আত্মস্থ করার একান্ত প্রয়ােজনীয়তার দিকটিকেও। এই তুলনার টানাপােড়েনে বিস্তারিত হয়ে অশােক মিত্রের ‘ভারতের চিত্রকলা সমৃদ্ধ হয়েছে। যুগপরম্পরায় রাজনৈতিক ও সামাজিক বিবর্তনের সঙ্গে ভারতীয় চিত্রকলার সর্বাঙ্গীণ রসগ্রহণে বইটি ভারতীয় শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাসে নির্ভরযােগ্য দলিল হয়ে থাকবে।
Ashok Mitra যােগেশচন্দ্র ও ঊষাবতী মিত্রর জ্যেষ্ঠপুত্র। জন্ম ১৯১৭। শিক্ষা প্রেসিডেন্সি কলেজ ও অক্সফোর্ডের মার্টন কলেজে। ১৯৩৯ সালে আই. সি. এস-এ যােগদান। কর্মসূত্রে বিধানচন্দ্র রায় এবং প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের সান্নিধ্যলাভ। ভারত সরকারের অধীনে রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সেনসাস কমিশনার (১৯৫৮-১৯৬৮); সেনসাসের কাজের সঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগ, অসামরিক বিমান ও পর্যটন বিভাগ, এবং যােজনা কমিশনের সচিব এবং সবশেষে রাষ্ট্রপতির সচিব। (১৯৬৫-১৯৭৫)। রাষ্ট্রপতির সচিবের কাজের সঙ্গে ১৯৭২-১৯৭৫ এবং অবসরগ্রহণের পর থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সােস্যাল সায়েন্স বিভাগে অধ্যাপনা। পরে জে এন ইউ এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে সম্মানিত অধ্যাপক। সােভিয়েট যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকাডেমি অভ সায়েন্স-এর ডি. এস-সি (সাম্মানিক)। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও বিভিন্ন আন্তজাতিক সংস্থার জনসংখ্যা বিষয়ক চর্চা বিভাগের সদস্য। ভারতের আদমসুমারি এবং জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যের বিচার-বিশ্লেষণে অসামান্য কৃতিত্ব। বিশিষ্ট শিল্প-সমালােচক। ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় নানা গ্রন্থ রচনা : Census Report of West Bengal 1951, The Tribes and Castes of West Bengal, District Gazetteers, Three Score and Ten I & II, তিন কুড়ি দশ, পশ্চিম ইওরােপের চিত্রকলা, ছবি কাকে বলে, ইত্যাদি। রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত (১৯৯৪)।