১৯৫৬র প্রথম দিন যখন আপন এক্তিয়ার অথচ নিতান্ত সংকোচবশে একটি ঘরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ছয়টি বিভাগের সচিব হয়ে বসলুম, তখন মহারথী অগ্রজ সচিবদের পাশে আমার মনের ভাব প্রবেশিকা পাশের পর প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হবার মত হয়েছিল। এই মনোবৃত্তির পুনরাবৃত্তি হয় ১৯৫৮ সালের জুলাই মাসে দিল্লীর কেন্দ্ৰীয় সরকারের কাজে ঢুকে। আশা করি নেহরু যুগের দ্বিতীয়ার্ধ, অর্থাৎ ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৪ এবং তার পর থেকে ১৯৬৬র শেষ (যার মধ্যে আমি লালবাহাদুর শাস্ত্রীর যুগ ও ইন্দিরা গান্ধীর প্রথম বছর সামিল করেছি) এই এগারো বছরে পশ্চিমবঙ্গে, কেন্দ্রে, ও ভারতের সর্বত্র দেশ গড়ার জোয়ার কীভাবে আসে তার কিছুটা আস্বাদ পাঠক এই খণ্ডে পাবেন। ‘তিন কুড়ি দশে'র চতুর্থ খণ্ডের মুখবন্ধে এই মর্মে নিবেদন থেকে অনুমান করা হয়ত সম্ভব নয়, সমাজে আই-সি-এস অভিধায় পরিচিত অশোক মিত্র তাঁর আত্মজীবনের এই খণ্ডে, পূর্বের তিন খণ্ডের মতই, উপরন্তু এই যুগে তাঁর কর্মপরিধির বিচিত্র বিস্তারে, অভিজ্ঞতায় এবং জগত ও জীবনসম্বন্ধে মানবিক ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসার স্মৃতিচিত্রে, সমাজের তৃণমূলের মানাস্তরের জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে জ্ঞানীগুণী মহাভাগদের সংস্পর্শের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি শুনিয়েছেন বিধানচন্দ্র রায়, গোবিন্দবল্লভ পন্থ, জওহরলাল নেহরু, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধীসহ যাবতীয় রাজ্য ও কেন্দ্ৰীয় জীবনের কথা। জানিয়েছেন সরকারি কাজ উপলক্ষে দেশবিদেশে সফরের বিবরণ। তা সত্ত্বেও এই আত্মজীবনী মুখ্যত পুত্র, পিতা, স্বামী ও অভিজ্ঞতা- পিপাসু এক খাঁটি বাঙালির কথা।
Ashok Mitra যােগেশচন্দ্র ও ঊষাবতী মিত্রর জ্যেষ্ঠপুত্র। জন্ম ১৯১৭। শিক্ষা প্রেসিডেন্সি কলেজ ও অক্সফোর্ডের মার্টন কলেজে। ১৯৩৯ সালে আই. সি. এস-এ যােগদান। কর্মসূত্রে বিধানচন্দ্র রায় এবং প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের সান্নিধ্যলাভ। ভারত সরকারের অধীনে রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সেনসাস কমিশনার (১৯৫৮-১৯৬৮); সেনসাসের কাজের সঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগ, অসামরিক বিমান ও পর্যটন বিভাগ, এবং যােজনা কমিশনের সচিব এবং সবশেষে রাষ্ট্রপতির সচিব। (১৯৬৫-১৯৭৫)। রাষ্ট্রপতির সচিবের কাজের সঙ্গে ১৯৭২-১৯৭৫ এবং অবসরগ্রহণের পর থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সােস্যাল সায়েন্স বিভাগে অধ্যাপনা। পরে জে এন ইউ এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে সম্মানিত অধ্যাপক। সােভিয়েট যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকাডেমি অভ সায়েন্স-এর ডি. এস-সি (সাম্মানিক)। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও বিভিন্ন আন্তজাতিক সংস্থার জনসংখ্যা বিষয়ক চর্চা বিভাগের সদস্য। ভারতের আদমসুমারি এবং জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যের বিচার-বিশ্লেষণে অসামান্য কৃতিত্ব। বিশিষ্ট শিল্প-সমালােচক। ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় নানা গ্রন্থ রচনা : Census Report of West Bengal 1951, The Tribes and Castes of West Bengal, District Gazetteers, Three Score and Ten I & II, তিন কুড়ি দশ, পশ্চিম ইওরােপের চিত্রকলা, ছবি কাকে বলে, ইত্যাদি। রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত (১৯৯৪)।