ফ্ল্যাপে লিখা কথা শহরের নামকরা এক কফি শপে অপেক্ষা করছে বেকার নীলু। বন্ধু রূপম ইচ্ছে করেই দেরি করছে আজ। তার ধারণা তাতে নীলু কফি শপটা ভালভাবে লক্ষ্য করবে। কেননা রূপম তার মামার এই কফি শপে নীলুকে ম্যানেজারের চাকরি দিয়ে চমকে দিতে চায়। অথচ লেখক নীলু তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। হঠাৎ ও দেখতে পায় গোলাপী রঙের ছাতা মাথায় দিয়ে আকর্ষণীয় ফিগারের একটি মেয়ে খুব দ্রুতগতিতে রাস্তা পার হয়ে কফি শপের দিকেই আসছে। মনে আশার আলো জাগে তার যাক, কিছুক্ষণ অন্তত মেয়েটির দিকে তাকিয়ে চোখ জুড়ানো যাবে। ছাতা বন্ধ করার পর দেখতে পেলো মেয়েটি তারই ছোট বোন রিনি। রিনিকে কেন্দ্র করেই এ উপন্যাসের কাহিনী বিধৃত হয়েছে। একে-একে ৪/৫ জন বয়ফ্রেন্ড পরিবর্তন করে অগ্রজ ভ্রাতার বিদ্বান-বন্ধু সুমনতকে তার বা যেয়ে প্রেম নিবেদন করে রিতীমতো সবাইকে চমকে দিয়েছিল। কিছুদিন পর ... পেশায় অধ্যাপক সুমন্ত এক সেমিনারে যোগ দিতে ব্যাঙ্গালোর যায়- এয়ারপোর্ট যেয়ে সী অফ পর্যন্ত করে আসে রিনি। সেই রিনিই আবার সুমন্তর অনুপস্থি<তিতে এশিয়া কাপ বিজয়ী গলফ খেলোয়ার সঞ্জয় সিং-এর প্রেমে পড়ে।
নিজের ইচ্ছামাফিক দিনে বাবা এবং একমাত্র ভাই উপস্থিত থাকতে পারবে না জেনেও নিজেই বিয়ের তারিখ ঠিক করে নেয় রিনি। কিন্তু যখনই জানতে পারে তার বিয়ের আগেই ফিরে আসছে সুমন্ত তখন মেকি আধুনিকতার আবরণে মোড়া রিনি ছুটে আসে নীলুর কাছে। সুমন্ত যেনো তার বিয়েতে না আসে সে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু নীলু তাকে রাজী হয় না।
রিনি বাবা এবং দাদা কলকাতার বাইরে তাই তার মায়ের অনুরোধে তিন বন্ধু রাজী হয় সঞ্জয়দের ভাগলপুরের বাড়ি যেতে। সঞ্জয়দের বাড়ী থেকে ফেরার দিন রিনির বান্ধবী টুলটুল সঙ্গী হয় তিনি বন্ধুর। পথিমধ্যে ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে। জন্ম নেয় নতুন এক রূপকথার।
সব কাহিনীর মালা নিপূণভাবে একই সূতোয় গেঁথেছেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাকার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।