ঈভের ছায়া নফ্স জলবেশ্যা স্বপ্নের ভেতর হাঁটাচলা তৃতীয় এক নদী ....................... গল্পের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো..... আবিদ বেপারি গায়ের জামাটা খুলে ¯তূপ করে দড়ির ওপর রেখে সাপের ঝুড়িগুলোর কাছে যেখানে বেউলা তার কদলীকাণ্ডের মত নগ্ন উরুযুগল ভাঁজ করে শুয়ে আছে সেখানে গিয়ে বসলো। তার সামনে গুম্বুজের মত বেউলার সুডৌল হাঁটুর চূড়া উঁচু হয়ে আছে। আবিদ বেপারি নিজের হাঁটুর ওপর, নিজেও একটু উঁচু হয়ে উঠলো। তার মাথা সাপের সাজানো ঝুড়িগুলোর সমান হলে সে দেখলো বেউলা চোখ মুদে গম্ভীর, থমথমেভাবে শুয়ে আছে। আর তার বুকের ওপরে গোল আতাফলের মঝে বসা দুটি ভ্রমরের মত স্তনের বোটা সদাজাগ্রত কালো আঁখিতারার মত স্থিরভাবে বেপারির উলঙ্গ দেহসৌষ্ঠব নিরীক্ষণ করে স্তম্ভিত, অভিভূত। কোমল স্পর্শে বেপারি বেউলার গুম্বুজের মত হাঁটুতে হাত রাখলে মেয়েটি অতি ধীরে তার ভারি উরুযুগলের একটি ফাঁক করে দিল। যুগলের বাম স্তম্ভ জঙ্ঘার একপাশে আস্তে নেমে গেলে বেউলা তার ভাঁজ করা বা পায়ের ভাঁজ খুলে পাটাতনের ওপর নিঃশব্দে স্থাপন করলো। বেশ আরামের সাথে রাখলো পা’টা। অন্য পা’টাও এভাইে রাখবে ভেবে বেপারি অপেক্ষা করছে। কিন্তু স্তম্ভটা অনড়। বেপারি তার ডান হাতটা আবার স্তম্ভের চূড়ায় রাখতে গিয়ে বুঝলো হাতটা কাঁপছে। ঠিক জালি লাউয়ের মোটা লতার মত কাঁপছে। বেপারির স্পর্শে বেউলা ঘুমজড়ানো ধানচেরা চোখ দু’টি মেললো। দৃষ্টিতে গভীর ঘুমের অলসতা ছাড়া আর কোনো অনুভূতি বোঝা গেল না। কালো মাংসল ঠোঁটজোড়ায় কোনো বাসনার কুঞ্চন নেই। বরং কেমন দৃঢ়তায় সংবদ্ধ। বেপারি কাঁপা গলায় বললো, ‘পাও সরাও বাইদানি।’ বেপারীর ‘বাইদানি’ সম্বোধনে বেউলার চাপা ঠোঁটের ওপর হাঁসির একটু মৃদু ঝিলিক খেলে গেলো। সে অনুমান করলো তার মহাজনের অবস্থা কাহিল। বেউলা তার ডান উরু একটু ডান দিকে হেলিয়ে প্রসারিত করতে লাগলো। তবে তা পাটাতনের ওপর না বিছিয়ে অকস্মাৎ তুলে দিলো বেপারির বিস্তৃত কাঁধের ওপর। পায়ের পাতা কাঁধ অতিক্রম করে গিয়ে সাপের ঝুড়ির ডালায় ঠেকলো। বেপারি বেউলার এই উদার সম্প্রসারণে কৃতার্থ হয়ে তার ডান হাঁটুর পাশে ঠোঁট ঘষতে লাগলো। দর দর করে ঘাম ঝরছে আবিদের পেশিবহুল পিঠ আর বুকের পশম ভিজিয়ে। তার কোমরে মোটা ঘুন্সির তাগাটা ভিজে আঁট হয়ে আছে। বেপারির নগ্নতাও এখন শিল্পিত পাথরের মত সুন্দর আর ঋজু। যেন যাদুঘরে রাখা পাল যুগের কোনো অবলোকিতেশ্বরের মূর্তি ধরাচূড়া ফেলে দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসেছে। ........
বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন আল মাহমুদের কবিতার বই পড়েননি এমন সাহিত্যপ্রেমী খুঁজে পাওয়া ভার। গুণী এই কবি একাধারে একজন সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে তার কবি পরিচয়। আধুনিক বাংলা কবিতা নানা দিক থেকে তার কাছে ঋণী থাকবে। বাচনভঙ্গি আর রচনাশৈলীতে তার কবিতা সমকালীন যেকোনো কবির তুলনায় অনন্য। ‘কবিতাসমগ্র’ (দুই খন্ড) ‘উড়ালকাব্য’, ‘সোনালি কাবিন’, ‘আল মাহমুদের স্বাধীনতার কবিতা’, ‘প্রেমের কবিতা সমগ্র’, ‘আল মাহমুদের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ ইত্যাদি কবিতার বই নিয়ে আল মাহমুদ কবিতাসমগ্র। এছাড়াও আল মাহমুদ উপন্যাস সমগ্র প্রকাশিত হয়েছে তিন খণ্ডে। জাতীয় রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক টানাপোড়েন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি ও প্রেক্ষাপটসহ সমাজ ও ব্যক্তি জীবনের দ্বন্দ্ব স্থান পেয়েছে আল মাহমুদ এর বই সমূহ-তে। ‘কালের কলম’, ‘লোক লোকান্তর’, ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’, ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’, ‘আরব্য রজনীর রাজহাঁস’, ‘গল্প সমগ্র’, ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য লেখা। আল মাহমুদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে। তার পুরো নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। শিক্ষাজীবনেই তিনি লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত হন। রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল আর মধ্যযুগের বৈষ্ণব পদাবলী পাঠ করতে করতে নিজের কবি প্রতিভা আবিষ্কার করেন তিনি। ১৯৫৪ সালে সাপ্তাহিক কাফেলা পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। কিছুকাল পরই এ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। পুরো ৬০-এর দশক জুড়ে তিনি অসংখ্য কবিতা রচনা করেন এবং কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও খ্যাতি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি প্রবাসী সরকারের হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ পত্রিকায় সরকার বিরোধী লেখালেখির কারণে এক বছরের জন্য কারাদণ্ডও ভোগ করতে হয় তাকে। ১৯৭৫-৯৩ সাল পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে কাজ করে কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কবি আল মাহমুদ তার অনবদ্য রচনাশৈলীর জন্য ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’, ‘একুশে পদক’, ‘জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার’, ‘নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক’ সহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ২০১৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তিনি পরলোকগমন করেন।