১২ জুনের নির্বাচনের পর দেশে আসিয়া তাজ্জব আলীর তাজ্জব বনিবার পালা আর শেষ হয় না। এক একটা খবর শোনে, আর চক্ষু ছানাবড়া হয়। গণতন্ত্রের অতি ভক্ত এবং পরম পূজারী তাজ্জব আলী নিজ দেশে গণতন্ত্রের বেহাল দশা দর্শন করিয়া স্বাধীনতা লাভের দুই বছর পরই দেশত্যাগ করিয়াছিল। বাহাত্তর সালে মালিবাগ মোড়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর জনৈক নেতা যখন হুংকার ছাড়িয়া বলিলেন যে, 'বন্ধু রাষ্ট্রে'র সমালোচনা যদি আর কখনো করা হয়, তাহা হইলে মওলানা ভাসানীর জিহ্বা টানিয়া ছিড়িয়া ফেলিবো, ভীষণ ভয় পাইয়া গিয়াছিলো তাজ্জব আলী। সে ভাবিতে লাগিলো, মওলানা ভাসানীর জিহ্বার-ই যখন এই দশা, তখন তাজ্জব আলীদের জিহ্বা আর রক্ষা করে কে? দিন দুই পর পত্রিকার পাতায় রাজপথে কুড়াইয়া পাওয়া বেওয়ারিশ লাশের ছবি দেখিয়া বেচারা আরো ঘাবড়াইয়া গেলো। জানের মায়া বড় মায়া। সে সিদ্ধান্ত নিয়া ফেলিলো, আর দেশে থাকিবে না। যেই কথা, সেই কাজ। তাহার চিত্ত দৌর্বল্যের বিষয় মাতা-পিতার অজ্ঞাত নয়। ছেলের রক্তশূন্য চেহারা দেখিয়া তাহার মাতা-পিতাও চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। অবশেষে তাজ্জব আলীর কথা মতো তাহাকে বিদেশে পাঠাইয়া দেওয়া হইলো। স্ত্রী এবং পুত্র-কন্যাগণ দেশেই থাকিয়া গেলো।
কাজী সিরাজ। জন্ম ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার সম্রান্ত চিওড়া কাজী বাড়িতে। তার পিতা মরহুম কাজী আফাজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন সরকারি চাকুরে। মা মরহুমা সালেহা খাতুন ছিলেন সুগৃহিনী। কাজী সিরাজ মূলত একজন রাজনৈতিক কর্মী। তিনি ১৯৬৫ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন)- এর একাধারে চট্টগ্রাম শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক, জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন; কাজ করেন ২ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর সাব-সেক্টরে।। আগরতলা থেকে প্রকাশিত কাজী জাফর আহমদ সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘স্বাধীন বাংলা’র তিনি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি রাজনীতির পাশাপাশি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সাল থেকেই তিনি মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) প্রাদেশিক কাউন্সিলর ছিলেন। মাওলানা ভাসানীর আর্শীবাদ নিয়ে ক্যাপ্টেন (অবঃ) হালিম চৌধুরী, কাজী জাফর আহমদ, রাশেদ। খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনাে, আবদুল মান্নান ভূইয়া, মােস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখের নেতৃত্বে ইউনাইটেড পিপলস পার্টি গঠনের পর তিনি ইউপিপি’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হন। ১৯৭৭ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদী যুব কেন্দ্র গঠন করেন ও সংগঠনের আহ্বায়ন হন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠনের পর তিনি সে দলে যােগদান করেন ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয়। আহবায়ক কমিটির সাংগঠনিক উপ-পরিষদের আহবায়ক মনােনীত হন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক ১৯৮০ সালের ১৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম আহবায়ন মনােনীত হন তিনি। পরে তিনি এই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন ।। বর্তমানে তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তার স্ত্রী অধ্যাপিকা শাহরিয়া আখতার বুলু অষ্টম জাতীয় সংসদে এম.পি ছিলেন। কাজী সিরাজ দু’কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ষােল।