বাংলাদেশের সাংবাদিকতার অঙ্গনে বিশেষ করে কলামিস্টদের মধ্যে কাজী সিরাজ একটি সুপরিচিত নাম। তার এই অর্জন অল্প সময়ের নয়, রাজনীতি এবং সাংবাদিকতার দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আজকে তার এই অবস্থান। স্পষ্টভাষী এই সাংবাদিকের 'বাংলাদেশ প্রতিদিন'- এ ২০১৩ সালে প্রকাশিত লেখাগুলোর সংকলন 'সত্যভাষণ'। বিগত ২০১৩ সাল ছিলো দেশের জন্য একটি অস্থির বছর। দেশে কি ঘটছে, কি ঘটবে, তা নিয়ে দেশবাসী ছিলো চরম উৎকণ্ঠায়। বিগত এই এক বছরের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা-ঘটন-অঘটন, সামাজিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে কাজী সিরাজ দেখেছেন ঘটনার গভীর থেকে। 'সত্যভাষণ' সংকলনের লেখাগুলোয় সেই সমস্যা সংকটের যৌক্তিক বিশ্লেষণের সঙ্গে সংকট উত্তরণের উপায়ও তার লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তার যৌক্তিক বিশ্লেষণ ঘটনা পরম্পরায় অধিংকাশ ক্ষেত্রে মিলে গেছে কাকতালীয়ভাবে নয়, যৌক্তিকভাবেই। সত্যভাষনের লেখাগুলোর বিষয়বস্তু চলমান রাজনীতি হলেও নিবন্ধগুলো বস্তুনিষ্ঠতা ও যুক্তিনির্ভর করার জন্য তিনি অলোকপাত করেছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশের অতীত ঘটনাবলী ও ইতিহাসের প্রতি। সেই সঙ্গে তার লেখায় উঠে এসেছে ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন ও দিক-
কাজী সিরাজ। জন্ম ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার সম্রান্ত চিওড়া কাজী বাড়িতে। তার পিতা মরহুম কাজী আফাজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন সরকারি চাকুরে। মা মরহুমা সালেহা খাতুন ছিলেন সুগৃহিনী। কাজী সিরাজ মূলত একজন রাজনৈতিক কর্মী। তিনি ১৯৬৫ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন)- এর একাধারে চট্টগ্রাম শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক, জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন; কাজ করেন ২ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর সাব-সেক্টরে।। আগরতলা থেকে প্রকাশিত কাজী জাফর আহমদ সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘স্বাধীন বাংলা’র তিনি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি রাজনীতির পাশাপাশি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সাল থেকেই তিনি মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) প্রাদেশিক কাউন্সিলর ছিলেন। মাওলানা ভাসানীর আর্শীবাদ নিয়ে ক্যাপ্টেন (অবঃ) হালিম চৌধুরী, কাজী জাফর আহমদ, রাশেদ। খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনাে, আবদুল মান্নান ভূইয়া, মােস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখের নেতৃত্বে ইউনাইটেড পিপলস পার্টি গঠনের পর তিনি ইউপিপি’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হন। ১৯৭৭ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদী যুব কেন্দ্র গঠন করেন ও সংগঠনের আহ্বায়ন হন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠনের পর তিনি সে দলে যােগদান করেন ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয়। আহবায়ক কমিটির সাংগঠনিক উপ-পরিষদের আহবায়ক মনােনীত হন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক ১৯৮০ সালের ১৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম আহবায়ন মনােনীত হন তিনি। পরে তিনি এই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন ।। বর্তমানে তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তার স্ত্রী অধ্যাপিকা শাহরিয়া আখতার বুলু অষ্টম জাতীয় সংসদে এম.পি ছিলেন। কাজী সিরাজ দু’কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ষােল।