পরকপালে রাজারানী - ২য় (হার্ডকভার)

পরের সন্ধ্যা থেকে রানীর নতুন জীবন শুরু। সকাল থেকেই একটা চাপা উত্তেজনার মধ্যে কেটেছে। গত সন্ধ্যায় খামোখা রাজাবাবুর সঙ্গে ঝগড়াটা হয়ে গেল। কিন্তু হয়ে রানীর দিক থেকে ভালো হয়েছে। না হলে আদরের ছেলে ঠিক তার মা-কে গিয়ে বলত বউয়ের সঙ্গে এক মাস্টারের কাছে পড়বে না, তার ঘেন্না করে। রাগের মাথায় মনের কথাটা বলে ফেলেছিল বলেই তো কমল-মামু, শংকরীদা, আর কনুদা তাকে বোঝাতেও পেরেছে, ঠাণ্ডা করতেও পেরেছে। কনুদা কি বোঝালো, শ্বশুরের কোন বই খুলে কার্টুন-মার্টুন কি শব্দ বার করে দেখে নিতে বলল, তা অবশ্য রানীর মাথায় ঠিক ঢোকেনি।
কেবল এটুকু বুঝেছে অমন বিচ্ছিরি সব ছবি এঁকেও গলাকাটা যাবার মতো দোষ কিছু করা হয়নি। পরে সুযোগ পেলে রানী কনুদাকেই জিগ্যেস করে ব্যাপারটা বুঝে নেবে। কিন্তু রাজাবাবু যে মায়ের কাছে আর নালিশ-টালিশ করবে না বা এক মাস্টারের কাছে পড়তে আপত্তি করবে না, সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা গেছে। ... সবেতে মা-মা করে, উঠতে-বসতে মায়ের কাছে নালিশ করবে বলে শাসায়, রানীর তাই মাঝে-মধ্যে রাগ হয়ে যায়। কিন্তু ছেলে যে খারাপ নয় এটা রানীকে স্বীকার করতেই হবে। শংকরীদা, কনুদা আর কমল-মামুকে ভালো যেমন বাসে, তেমনি মান্যিও করে। আর খুব বেশি রাগ না হলে যতই শাসাক, মায়ের কাছ নালিশ সত্যিই করে না।
যাই-হোক, সকাল থেকে রানী রাজাবাবুর সঙ্গে একটু আপসের ফাঁক খুঁজছিল। অতগুলো বড় মানুষের সামনে অমন ঝাঁকিয়ে উঠে ‘ও রানী না মেথরানী' বলা উচিত হয়নি। অমন রাগ না করলেও শংকরীদারা ঠিক ও-ছেলেকে বুঝিয়ে ঠাণ্ডা করতই। রাগের মাথায় খুব বিচ্ছিরি কথাই যে বলে ফেলেছে রানী নিজেও সেটা অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু সকাল থেকে দুই-একবার রাজাবাবুর দেখা যা-ও বা পেল, কথা বলার ফুরসত হলই না। স্কুলে যাবার আগে চান-খাওয়ার সময় বড়দের কেউ না কেউ সঙ্গে লেগেই থাকে। স্কুল থেকে ফিরে মায়ের ঘরে বসে জলখাবার খেয়ে নিচের কম বয়সী ছাত্রদের সঙ্গে খেলতে চলে গেল। ভারি তো খেলা, রানী ছোটমহলের দিকের জানলায় দাঁড়িয়ে ক'দিন দেখেছে, সমস্তক্ষণের মধ্যে পাঁচটা বলও পায়ে ঠেকাতে পারে কি না সন্দেহ, বোকার মতো ছোটাছুটি করে, নয়তো সঙের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। ছাত্রাবাসের ছোট ছেলেরাও রাজাবাবুর থেকে ঢের বড়।
বিকেলের আলো কমে আসতে রানীর উসখুসুনি বাড়তে থাকল। শংকরীদা বলে দিয়েছিল, ইচ্ছে করলে আজ থেকেই রাজাবাবুর মাস্টারের কাছে পড়তে পারে। তাঁকে বলে রাখা হবে।