প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা: সু নীল গঙ্গোপাধ্যায়ের যাবতীয় কাব্যগ্রন্থ কালানুক্রমিক রূপে বিন্যস্ত করে প্রকাশিত হচ্ছে 'কবিতাসমগ্র'র এক একটি খণ্ড। বাংলা কবিতার যাঁরা প্রেমিক পাঠক, তাঁদের কাছে এ এক মস্ত খবর সন্দেহ নেই। কেননা, বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম সেরা রচয়িতা যিনি, তিনি বাংলা কবিতারও এক অতি শক্তিমান স্রষ্টা, তা কে না জানেন। এই কথাটাও সবাই জানেন যে, পঞ্চাশের দশকে 'কৃত্তিবাস' নামক যে-আন্দোলন একদিন বাংলা কবিতার মোড় একেবারে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল, সুনীলই ছিলেন তার নেতৃস্থানীয় কবি। পাঠক, সমালোচক- সবাই সবিস্ময়ে লক্ষ করেছিলেন যে, এই কবি কোনও পুরনো কথা শোনাচ্ছেন না; তিনি যা কিছু লিখছেন, তারই ভিতর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে এক ঝলক টাটকা বাতাস, আর সেই বাতাস ছড়িয়ে দিচ্ছে এমন এক সৌরভ, যা তার আগে পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কথাসাহিত্য ও কবিতার দাবি একই সঙ্গে মেটানোর কাজটা বড় শক্ত। এ কাজ সবাই করতে পারেন না। সুনীল যে পেরেছেন, তার কারণ বোঝা কঠিন নয়। সবদিক থেকে একজন সাহিত্যিক হয়েও এই সরল সত্য তিনি কখনও বিস্মৃত হননি যে, মূলত তিনি কবিই, এবং গদ্য নয়, কবিতাই তাঁর প্রথম প্রেম। এই খণ্ডে সংযোজিত হল চারটি কাব্যগ্রন্থ- 'ভালোবাসা খণ্ডকাব্য', 'বাংলা চার অক্ষর', 'যার যা হারিয়ে গেছে', 'শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা' এবং একটি কাব্যনাটক 'প্রাণের প্রহরী'। এ ছাড়া তিনটি ছড়ার বই- 'মালঞ্চমালা', 'আ চৈ আ চৈ চৈ', 'মনে পড়ে সেই দিন'। কয়েকটি ছড়াও সংযোজিত হয়েছে।
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।