"অবসরিকা" বইটির কিছু অংশ: মধ্য কলকাতার, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পাড়ায় তখন পড়ন্ত দুপুর। পার্ক স্ট্রিটের কাছে রিপন স্ট্রিটের দোতলা অফিসঘরের গ্র্যান্ড ফাদার ঘড়িটায় তখন চারটে বেজে দশ। আমি তখনও চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে হিসেবের খাতায় একমনে এন্ট্রি করে যাচ্ছিলাম। সেই সময় ছোকরা সহকর্মী সুকুমার বলে উঠলো, “আর কেন, বলরামদা? জানি আপনারা সেকেলে সেগুন কাঠ, লাস্ট মোমেন্ট পর্যন্ত অনেস্টলি কোম্পানিকে সার্ভিস দিয়ে যেতে চান। কিন্তু মিস্টার ধাওয়ান এরমধ্যেই আপনার খোঁজ করছেন।” চুকলিখোর চাটুজ্যেও এই বিকেলে আমার সঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে ভাল ব্যবহার করছে। এই বলরাম বিশ্বাসের দোষ ছাড়া কোনও গুণ যে লোকটা সারা জীবনেও দেখতে পায়নি, সারাক্ষণ যে সিনিয়র অফিসারদের কাছে অধস্তন কর্মীদের সবার হাঁড়ির খবর রিপোর্ট করেছে, সেও বলে উঠলো, “ওরে সুকুমার, বলরামদা একালের ছোঁড়া নন, ওঁরা যাদের নুন খেয়েছেন তাদের সেবা করতে কখনও পিছপা হন না।” চেয়ার ছেড়ে হাত ধুতে অফিসের কলঘরে ঢুকে পড়লাম। ওখানে বেসিনের কলটা আজকাল পুরো বন্ধ হয় না, টপটপ করে সারাক্ষণ জল পড়ে যায়। বহুকাল আগে এই অফিসের বড়সায়েব মিস্টার ক্যামকেল বলেছিলেন, “একটা কলের মুখ ঠিক বন্ধ না হলে বছরে কত হাজার গ্যালন জলের অপচয় হয় জানো? এই শহরেই কত যে জলের টানাটানি।” এখন এসব নিয়ে এই অফিসের কেউ আর মাথা ঘামায় না। কলের জল সারাক্ষণ টপটপ করে পড়ে যাচ্ছে--যেন মানুষের পরমায়ু তিলে তিলে অপচয় হয়ে….
শংকর একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক। তাঁর আসল নাম মণিশংকর মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল চৌরঙ্গী, সীমাবদ্ধ এবং জন অরণ্য। এই তিনটি বই নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। ২০১৬ সালে তিনি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট সম্মানে ভূষিত হন।