এক ভয়ঙ্কর ঝড় বয়ে গেল বাংলার ওপর দিয়ে । ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের ঝড়। ওলট-পালট ঘটে গেল বাঙ্গালীর সামাজিক জীবনে। বাঙ্গালীর মানসিকতায়ও ঘটলো পরিবর্তন। হের-ফের হলো জীবনের মূল্যবোধেরও। সেই ভয়ঙ্কর মন্বন্তরের পরে প্রায় ছ'টি বছর কেটে গেছে। দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর কোলে প্রায় এককোটি অসহায় মানুষকে সঁপে দিয়ে বাকিরা তখনও নিজেদের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। এমনি এক দিনে কাৰ্ত্তিক মাসের এক সকালে রাঢ় অঞ্চলের ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের এক ভূমিহীন কৃষকের বাড়িতে দশ বছরের একটি মেয়ে তার সতেরো বছরের ঘুমন্ত দাদার গায়ে ঠেলা দিয়ে তাকে ডাকছিল, ও দাদা—দাদা, আর কত ঘুমাবে ? এবার ওঠো। বেলা পানে তাকিয়ে দেখ ৷ এর পরে আর কখন মাঠে যাবে ? বোনের ডাকাডাকিতে দাদার কিন্তু ঘুম ভাঙ্গে না । একসময় দাদা নিজের গায়ের ছেঁড়া কাথাটাকে ভালোমত টেনে দিয়ে পাশ ফিরে আবার ঘুমোবার উপক্রম করতেই বোন জোর করে সেই ছেঁড়া কাঁথাখানাকে সরিয়ে নেয় । এতক্ষণে চোখ মেলে তাকায় সেই দাদা। কাৰ্ত্তিক মাসের প্রথম শীতে ঐ কাঁথার উষ্ণতার আমেজটুকু সরে যেতেই তার ভ্রুযুগল কুঁচকে ওঠে । পরক্ষণেই তার চোখ পড়ে বোনের মুখের ওপর । সঙ্গে সঙ্গে তার নিজের মুখের সেই বিরক্তির চিহ্ন ছাপিয়ে সেখানে ফুটে ওঠে স্নেহরসের ধারা। বোনের ঢলঢলে মুখখানার দিকে কয়েকপলক তাকিয়ে থেকে কাঁথাখানা আবার গায়ের ওপর টেনে দিতে দিতে দাদা বলে ওঠে, না, আজ আর মাঠে যাবো না। আজ অনেকক্ষণ ঘুমাবো ।